গরু চড়ানো সহ রানওয়ের একটি অংশ সর্ব সাধারনের চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের ফলে বরিশাল বিমান বন্দর ক্রমশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এয়ারপোর্টের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অংশে রানওয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে রানওয়ের ওপর দিয়ে স্থানীয় জনসাধারন চলাচলের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করায় সেখান থেকে অবাধে গরু ছাগলও প্রবেস করছে। রানওয়ের ওপর দিয়েও নির্বিঘেœ চলাচল কবরছে এসব প্রাণি। আর সীমানা প্রচীরের মধ্যে রানওয়ের পাশের বিশাল চারন ভ’মিতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধা ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু ছাগল। যা এ বিমান বন্দরে জন্য চরম ঝুকির সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বৈমানিকের। এমনকি ক্রমাগত ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথারেটির দায়িত্বশীলদের এতদিন তেমন কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে শণিবার সকাল থেকে সীমানা প্রাচীরের ভাঙা অংশগুলো মেরামত শুরু করেছেন কতৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল বিমান বন্দর ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করতে একাধীকবার তার সেল ফোনে যোগোযোগ করার পরে তিনি শণিবার দুপুরে কল রিসিভ করে জানান, বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙা সীমানা প্রচীরের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রায় দেড়শ একর জমি নিয়ে বরিশাল বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবন, ফায়ার স্টেশন ও রানওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে তিন শিফটে মাত্র ৩০ জনের মত আনসার ছাড়াও সিভিল এ্যভিয়েশনের কিছু নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। এত স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে বিশাল এলাকার নিরাপত্তা বিধান অসম্ভব বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক দায়িত্বশীল মহল।
উপরন্তু এ বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারন সহ নির্মিত ভিআইপি টার্মিনাল উন্মুক্ত করা সহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ স্থবির হয়ে আছে। ফরে এ বিমান বন্দরে যাত্রী সেবার মানও নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রতিদিন সরকারী বেসরকারী ৫টি ফ্লাইট এ বিমান বন্দরে পরিচালন হলেও অনেক সময়ই একই সাথে একাধীক ফ্লাইট অবতরনের ফলে যাত্রীদের বসার মত কোন স্থান থাকছে না এ বিমান বন্দরে। ফলে নারী ও শিশু যাত্রীরাও বিড়ম্বনায় পরছে। এমনকি মূল টার্মিনালের কনকর্স হলেই এখন ভিআইপিদের জন্য বড় একটি অংশ আটক বসার ব্যবস্থা করায় সমস্যা আরো বেড়েছে।
দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল বিমান বন্দরটির ভ’মি অধিগ্রহন শুরু হয় ১৯৬৫-৬৬ সালে। ১৯৬৮ সালে ১৮শ ফুট দৈর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ ‘শর্ট টেক অফ ল্যান্ডিংÑষ্টল পোর্ট’ নির্মান সম্পন্ন হলেও তৎকালীন পিআইএ’র কাছে ছোট মাপের কোন উড়জাহাজ না থাকায় এ স্টল পোর্ট চালু করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ৮ ডিসেম্বর পাক বাহিনী বরিশাল ত্যাগ করলে ঐদিন বিকেল ভারতীয় বিমান বাহীনী এ ষ্টলপোর্টে বোমা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। স্বাধিনতার পরে সরকার ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে রানওয়ে চালু করলেও ছোট মাপের উড়জাহাজের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে আকাশ যোগাযোগের একমাত্র এ অবলম্বনটি আর সচল নহয়নি।
১৯৭৯ সালে ২৩ নভেম্বর মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে বরিশালে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর নির্মান ও আকাশ পরিসেবা চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পরে সব কিছু স্থবির হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পরে বেগম খালেদা জিয়া সরকার বরিশাল বিমান বন্দর নির্মানে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করে। এ লক্ষে প্রাথমিকভাবে ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক এ অনুমোদনের পরে বিদ্যমান রানওয়ে সাড়ে ৪ হাজার ফুট লম্বা ও ১শ ফুট প্রস্থে সম্প্রসারন করা ছাড়াও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মান করা হয়। ১৯৯৫ সারেল ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ^াস এ বিমান বন্দর ও বরিশাল সেক্টরে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান ফ্লাইটেরও উদ্বোধন করেন।
পরবর্তিতে ভুমি অধিগ্রন করে বিমান বন্দরটির রানওয়ে ৬ হাজার ফুটে সম্প্রসারন ছাড়াও দু প্রান্তে ৫শ ফুট করে আরো ১ হাজার ফুট ওভার রান নির্মান করা হয়। ফলে এ বিমান বন্দরে ‘এফÑ২৮’ মানের জেট এয়ারক্রাফট পরিচালনও সম্ভব হয়েছে ইতোপূর্বে। এমনকি ২০০৬ সালে ঘূণিঝড় ‘সিডর’ দেশের দক্ষিণ উপক’লে আঘাত হানার পরে পুরো ত্রান ও পূণর্বাশন কার্যক্রম পরিচালিত হয় এ বিমান বন্দরের মাধ্যমে।
রানওয়ে সহ পুরো বিমান বন্দরটিকে সীমানা প্রাচীরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গত কয়েক বছরে। পাশাপাশি রাতের বেলা ফ্লাইট অপারেশন সচল রাখতে রানওয়ে লাইটিং সহ বিমান বন্দরটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করনেও পুরো এলাকা আলোকিত করা হয়েছে।
কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যায় করেও বরিশাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। এনিয়ে অনেকেই দায়ী করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের অবহেলা ও উদাশীনতাকে । তবে এ বিষয়ে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম তালুকদারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এখানের সার্বিক বিষয় প্রতিনিয়ত সদর দপ্তরকেও অবহিত করা হয়’ বলেও জানান তিনি। ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বরিশাল বিমান বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন