পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নিত করার কাজ চলছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় গত ২৯ আগষ্ট ২০২১ ইং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালী উদ্বোধন করেন, কক্সবাজার বিমান বন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়ে।
এক হাজার ৫ শত ৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ থেকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হবে দেশের চতুর্থতম বৃহত্তর বিমান বন্দর। রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্যে ৩০০ ফুট রানওয়ে নির্মিত হচ্ছে সমুদ্রের উপর। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার বিমান বন্দর দৃষ্টিনন্দন একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত হবে। এটি দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক আকর্ষণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে সহস্র বিদেশিদের নিয়মিত যাতায়াত কক্সবাজার বিমানবন্দরে। এর উপর প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এর যাতায়াত তো আছেই। তবে সম্প্রতি কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা হীনতা ভাবিয়ে তুলেছে বিমানে যাতায়াতকারীসহ সচেতন মহলকে।
গত মঙ্গলবার কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট ঝুঁকির মুখে পড়েও রক্ষা পেয়েছে অল্পের জন্য। রানওয়েতে দুটি গরুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরেও বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বিমান বাংলাদেশের ঢাকামুখী ওই ফ্লাইটটি। ফ্লাইটের ৯৪ জন যাত্রীও অক্ষত ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের উত্তর পাশে ঘটেছে এই দুর্ঘটনা।
সেদিন কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে বিমানের বোয়িং ফ্লাইটটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার সময় রানওয়েতে থাকা গরু দুটির সঙ্গে ডান পাখায় ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই গরু দুটি মারা যায়। তবে বিমানের ফ্লাইটটি ঠিকমতো আকাশে উড়তে সক্ষম হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেয়া হয় চার আনসার সদস্যকে। চার পাশে কাঁটাতারের ঘেরা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিমানবন্দর তদারকির জন্য বিমান বাহিনীর ২০ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নিশ্চিত করেছেন বিমান বন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ।
তিনি জানান, বিমানবন্দরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মেম্বার সিকিউরিটি গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফি কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের ১৭নং ডেল্টা পোস্টে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের সময় বিমানের ডান পাশের পাখায় ধাক্কা লেগে ২টি গরুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘতম রানওয়ে হতে যাওয়া অরক্ষিত কক্সবাজার বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার বিমান বন্দরে এই সময়ে দৈনিক ৪০ টি বিমান উঠানামা করছে। অথচ ১৬৩ জন আনসার ও এপিবিএন সদস্য থাকা সত্বেও বিমান উড্ডয়নকালীন সময়েও রানওয়েতে গরু ছাগল ও পথচারীদের বিচরণ উদ্বেগ জনক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বন্দরের ম্যানেজার নাকি এক মাস আগে যোগদান করেছেন তাই এসব বিষয় নিয়ে তিনি তেমন কিছু বলতে পারবেন না।ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গত কয়েক বছরে রানওয়েতে উড়োজাহাজের সামনে কুকুর ও পাখি পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এসব নিয়ে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মুর্তজা হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, আমি মাত্র মাসখানেক আগে এখানে এসেছি যা জানার তা বিমানের পিআরও (গণসংযোগ কর্মকর্তা) জানাবেন। তবে তিনি তদন্ত কমিটি ও আনসারদের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানিয়েছেন।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, আগে ছিল ছোট, এখন অনেক বড় ও দীর্ঘ হয়েছে রানওয়ে ও বিমানবন্দর। মাত্র ১২৯ জন আনসার ও ৩৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য রয়েছেন বিমানবন্দরের দায়িত্বে প্রয়োজনের তুলনায় আনসারের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন