বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তৈরি পোশাকের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান খাত পোশাক শিল্পে দীর্ঘদিন ধরেই মন্দাবস্থা চলছে। যে গতিতে খাতটি এগিয়ে যাচ্ছিল, বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি এর গতি অনেকখানি শ্লথ করে দিয়েছে। এর রেশ এখনও কাটেনি। রপ্তানির যে ধারাবাহিকতা তাতে ‘আপস অ্যান্ড ডাউন’ পরিলক্ষিত হচ্ছে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ খাতের রপ্তানি কমেছে। বিশেষ করে বিশ্বের নিয়মিত ও কিছু নতুন সৃষ্টি হওয়া বাজারে পোশাক রপ্তানির হার কমেছে। মূল বাজার ধরা হয় কানাডা, ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে। এছাড়া ব্রাজিল, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্কেও পোশাকের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেন বাদে সব দেশেই আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি কমেছে। রপ্তানিকারকদের মতে সারা বিশ্বে চাহিদার ধীর গতি এ খাতে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া এই তিন মাসে বিভিন্ন উৎসবে দীর্ঘ ছুটির কারণেও রপ্তানির হার কমেছে বলে তারা মনে করছেন।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ বিশেষ খাতের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। এ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গার্মেন্ট শিল্প অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। চীনের পর উৎপাদন ও রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮৩ ভাগই অর্জিত হয় এ খাত থেকে। একে রপ্তানির প্রধান ‘পাইপ লাইন’ও বলা হয়। এর পরপরই রয়েছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। বলা হয়, এ দুটি খাতই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল স্তম্ভ। দুঃখের বিষয়, বিগত কয়েক বছর ধরে এ দুটি খাত মন্দার শিকার। এর মূল কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সরকারের যথাযথ নীতি ও পরিকল্পনা এবং খাত দুটির নানা সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব। এর ফলে দুটি খাতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। জনশক্তি খাত থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো, তা কমে গেছে। এ খাতের মূল বাজার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে জনশক্তি রপ্তানি স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মন্দাবস্থার মধ্যে রয়েছে। সরকারের উদ্যোগের কমতি না থাকলেও বাজারগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে সচল হচ্ছে না। গার্মেন্ট খাতটি এখন অনেকটা চলছে এই রোদ এই বৃষ্টির মতো। স্থিতাবস্থার মধ্যে নেই। কর্মপরিবেশ নিয়ে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের নানা শর্ত ও হয়রানির কারণে এ খাতের মালিকদের ত্রাহি অবস্থার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। এর উপর রয়েছে সরকারের রাজনৈতিক নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রতি রপ্তানির মূল বাজার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর প্রচ্ছন্ন অনীহা। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্রের এক জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব গার্মেন্ট খাতের উপর পড়েছে। এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে সরাসরিই বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বন্ধ করেছে। যে কোনো কারণেই হোক বাজার যদি সংকুচিত হয়, তবে তার প্রভাব ঐ শিল্পের উপর পড়বেই। আমরা দেখেছি, ইতোমধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। অর্থাৎ এ খাতটি দিন দিন যেভাবে প্রসারিত হচ্ছিল, তা থমকে সংকোচন পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এখন সেসব প্রতিষ্ঠানই টিকে আছে যেগুলো বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠিত। যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর পণ্য যেমন রপ্তানি হতো, তেমনি নতুন প্রতিষ্ঠিত কারখানার পণ্যও তাতে যুক্ত হতো। গার্মেন্ট শিল্প খাতে যে স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল তা যেন অনেকটা হারিয়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব রপ্তানি খাতে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
পোশাক খাতে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর ঈর্ষার কারণ। এর অগ্রগতি থামাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে, বাংলাদেশের এ খাতটি যাতে প্রতিবেশী দেশের হাতে চলে যায়, এ নিয়ে নানামুখী অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। নানামুখী ষড়যন্ত্র করে খাতটিকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে পোশাক খাতটিকে একদিকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদন অব্যাহত রেখে রপ্তানিও করতে হচ্ছে। এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। কোন খাত এভাবে খুব বেশি দূর এগুতে পারে না। মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়ে উঠা একটি উজ্জ্বল খাতের এভাবে ন্যূব্জ হয়ে পড়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রধানতম এই রপ্তানি খাতটিকে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে। এ খাতের যত সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। যেসব পোশাক কারখানা অব্যাহতভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি করে চলেছে, সেগুলো ধরে রেখে নতুন নতুন কারখানা গড়ে তুলতে প্রণোদনাসহ উৎসাহ ও প্রাণিত করতে হবে। পোশাক কারখানাগুলোকেও বিদ্যমান রপ্তানি বাজার অটুট রেখে নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে, যাতে একদিকে আয় কমে গেলে অন্যদিকের আয় দিয়ে তার ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন