আফগানিস্তানে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করছে তালেবান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি অর্জন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সাহায্য প্রাপ্তির পথ সুগম করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার এ পদক্ষেপ ঘোষণা করেন তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা, যিনি গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে মনোনীত একজন আলেম যিনি দক্ষিণের শহর কান্দাহারে থাকেন বলে মনে করা হয়। মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে আগস্টে তালেবানের দখলের পর আফগানিস্তানে দারিদ্র্য বাড়ছে। তারপর থেকে বিদেশী সরকারগুলো তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে যা অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল।
ডিক্রিতে বলা হয়েছে, ‘(নারী ও পুরুষ) উভয়েরই সমান হওয়া উচিত, কেউ জোরপূর্বক বা চাপ দিয়ে নারীদের বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারবে না’।
আফগানিস্তানে বিগত দুই দশকের আন্তর্জাতিক উপস্থিতিতে নারীদের অধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, কিন্তু তালেবানদের প্রত্যাবর্তনের ফলে হুমকির মুখে দেখা যাচ্ছে। তালেবানরা ১৯৯০-এর দশকে তাদের পূর্বের শাসনামলে কার্যত নারীদের আবদ্ধ করে দিয়েছিল। তাদের জনজীবন এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।
দরিদ্র, রক্ষণশীল দেশে জোরপূর্বক বিবাহ আরো সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতরা তাদের অল্প বয়স্ক কন্যাদের বিয়ে দেয় একটি পাত্র-মূল্যের বিনিময়ে যা ঋণ পরিশোধ করতে এবং তাদের পরিবারের খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিক্রিতে বিয়ের জন্য ন্যূনতম বয়স উল্লেখ করা হয়নি, যা আগে ১৬ বছর বয়সে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে আফগানিস্তানে নারীদেরকে রক্তের অর্থের বিনিময়ের টোকেন হিসেবে বা বিরোধ বা উপজাতীয় বিবাদের অবসান ঘটানোর সম্পত্তির মতো বিবেচনা করা হতো। তালেবান এখন বলেছে যে, তারা এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। তারা আরো বলেছে যে, একজন বিধবাকে এখন তার স্বামীর মৃত্যুর ১৭ সপ্তাহ পরে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হবে। স্বাধীনভাবে সে তার নতুন স্বামী বেছে নিতে পারবে।
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিনের উপজাতীয় প্রথা অনুসারে, বিধবাকে তার প্রয়াত স্বামীর ভাই অথবা অন্য কোনো আত্মীয়কে বিয়ে করা বাধ্যতামূলক ছিল। তালেবান নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়েছে, তারা আফগান আদালতকে নারীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণের নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষ করে বিধবাদের সঙ্গে। গত আগস্টে ক্ষমতায় আসা গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, তারা জনগণের মধ্যে নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছে।
তালেবানের এ ধরনের ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই সন্তুষ্ট নারী অধিকার কর্মী ও সংগঠনগুলো। শুক্রবার কাবুলে এক কনফারেন্সে আফগান নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবা সিরাজ বলেন, এটি বিশাল ব্যাপার। যদি এটি হয়, যেমনটি হওয়ার কথা ছিল, তবে এই প্রথমবার তারা (তালেবান) এমন ডিক্রি জারি করলো। সূত্র : ডন, আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন