রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একের পর এক হত্যাকাÐ ঘটে চলছে। লাশের লাইন লম্বা হচ্ছে। এখানে রক্ত ও ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো হত্যাকাÐ হয়েছে তার কোনোটার বিচার হয়েছে বলে আমরা শুনিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন খুন করার নিরাপদ জায়গা। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যাকাÐের বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এদিন সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মানববন্ধন করে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা একটি মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিভাগের সামনে এসে আজকের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে।
মানববন্ধনে বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহীল বাকী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে নাকি কাফন-কফিনের ব্যবস্থা করবে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার জন্য আবাসিক হলে ওঠে। এখন দেখছি সেই হলেই সবচেয়ে অনিরাপদ। এটা একটা ধারাবাহিক হত্যাকাÐ। এর একটা সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার হওয়া দরকার।’ এসময় বিভাগের শিক্ষক শাতিল সিরাজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হবে। সব জায়গায় সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রহরীরা আছেন। কিন্তু তারা কী করছেন, তারা কোনো ঘটনাই ঠিকমত দেখতে পান না। তারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করলে অপরাধীদের ধরা সহজ হতো।’ মানববন্ধনে বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাÐে বলেন, ‘আমাদের বারবার এখানে দাঁড়াতে হয়। একবার শিক্ষক হত্যাকাÐের জন্য, একবার শিক্ষার্থী হত্যাকাÐের জন্য। আমাদের এক শিক্ষার্থীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি প্রশাসন সচেষ্ট হয় তাহলে এই হত্যাকাÐ অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে বের করতে পারে, কারা এটা ঘটিয়েছে। আমি এই বিভাগের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাÐের সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিচার দেখতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও আমার দাবি, যদি এই ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকে তাহলে কেউ নিরাপদ নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বরকে আর রক্তপুরী দেখতে চাই না। আমরা চাই না, এভাবে আবারও মানববন্ধনে দাঁড়াতে।’নিহত লিপুর সহপাঠী রাইসা জান্নাত বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি পড়াশোনা করতে। অথচ আমাদের বারবার মৃত্যু দেখতে হচ্ছে। আমরা লাশ হয়ে ফেরার জন্য এখানে আসিনি। আমরা ভালো নেই, আমাদের মা-বাবা ভালো নেই, তারা সবাই চিন্তিত। আমরা এ আতঙ্ক থেকে মুক্তি চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাইসা জান্নাত আরো বলেন, ‘আমরা শুধু বিচার চাই, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব বলেন, ‘আমার ভায়ের লাশ তার মায়ের কোলে তুলে দিয়ে এসেছি। আর কত মায়ের স্বপ্নভঙ্গ করে তার মায়ের কোলে তুলে দিতে হবে?’
বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদ রিন্টু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আবাসিক হল। আর সেখানে শিক্ষার্থীরা খুন হচ্ছে। আমি লিপুর মায়ের কাছে কোনো উত্তর দিতে পারিনি। তার মা আমাকে বলেছিল, ‘তোমরা এর বিচার করো বাবা, বিচার করো’। আমরা বিচার চাই, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আর কোনও মায়ের বুক খালি হতে দেব না।”
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন, বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, রেজাউল করিম শামীম, জোবাইদা শিরীন জ্যোতি, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বিরা ইয়াসমিন হুসাইন মিঠু প্রমুখ। এসময় প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঝিনাইদহ জেলা সমিতি। এখানে জেলা সমিতির শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন শেষে তারা একটি মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এদিকে এই হত্যাকাÐের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে লিপুর গ্রামের লোকজন ও তার প্রাক্তন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে তারা এ হত্যাকাÐের দ্রæত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হলের ডাইনিংয়ের ড্রেন থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন লিপুর চাচা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন