লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলায় এবার আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ছিল হাসি। পাকা ধান ঘরে তোলার সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে এখানকার কৃষকদের মাথায় হাত। মাঠ জুড়ে সোনালী ফসল কিন্তু হঠাৎ করেই বাগড়া বসিয়েছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে কাটা ধান এখন পানির নিচে। মাঠে থাকা পাকা ও আধাপাকা ধান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। জেলার রামগতি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কৃষকরা জানান, উপক‚লীয় এলাকা হওয়ায় মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও টানা বৃষ্টির পানিতে কৃষকদের সোনালী ফসল এখন পানির নিচে। আশপাশে খাল থাকলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি কোথাও সরানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে সব আশা শেষ হয়ে যাবে তারা। ধারদেনা করে আমন ধান চাষ করে এখন সেই দেনা পরিশোধ করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কারিম জানান, তিন খন্ড জমিতে আমন চাষ করেছেন তিনি। দশজন শ্রমিক দিয়ে গত শনিবার পাকা ধান কেটে জমিতে রেখেছেন মেশিনে ছড়ানোর আশায়। হঠাৎ করে বৃষ্টিতে সকল স্বপ্নই ভেঙে গেল তার। তিন খন্ড জমির ধান এখন পানির নিচে। নালা কাটার পাশাপাশি সেচ দিয়েও কুল পাচ্ছেন না তিনি। এভাবে আরো দু’একদিন থাকলে ঝরে পড়বে তার সবগুলো ধান। ধার দেনা করে চাষ করে এখন হতাশায় আছেন আবদুল করিম। চরমেহার এলাকার আজাদ উদ্দিনের পানিতে ডুবে থাকা কাটা ধান রাস্তার ধারে উঠাতে ব্যস্ত। তিনি জানান, ধানের ফলন দেখে খুশিই ছিলাম। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। আগে তিন মণ ধান পেলে এখন পাবো মাত্র এক মণ। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগতি উপজেলায় এবার ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে যথা সময়ে ধান কাটার ব্যবস্থা না করায় ৩০ হেক্টর ধান পুরো কিংবা আংশিক পানিতে ভাসছে। সব সময়ে ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই কাটার ব্যবস্থা করার জন্য কৃষককে পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হওয়ায় বৃষ্টির কবলে পড়তে হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ১ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা অবস্থায় জমিতে রয়েছ। অবশিষ্ট ধান ক্ষেতে পাকা এবং আধা পাকা অবস্থায় আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা কিংবা আংশিক পানিতে থাকা ধান ক্ষেতের পানি দ্রæত নিষ্কাশনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে কাটা ধান সংরক্ষন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমনের ভালো ফলন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা আরো জানান, সময় মত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া, সার ও বীজ সরবরাহ করায় এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় আশানুরুপ ফলন হয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় শতাধিক কৃষকের মাঝে হাইব্রিড এবং উপশী জাতের ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন