রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জটিল রোগে আক্রান্তদের করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি

চট্টগ্রামে ২৩৪ রোগীর ওপর সমীক্ষা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

আগে থেকে যারা জটিল রোগে আক্রান্ত করোনায় তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত হলেও যাদের আগে থেকে কোনো জটিল রোগ নেই, তাদের মৃত্যুঝুঁকি নেই। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মারা যাওয়া ৮৯ শতাংশ রোগীই আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এমন ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আইসিইউতে নেওয়ার পরও তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ওপর ‘মৃতুঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক এ সমীক্ষা চালানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেনারেল হাসপাতাল যৌথভাবে এ সমীক্ষা চালিয়েছে। তারা এই সমীক্ষাকে গবেষণা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। গতকাল বুধবার ভেটেরিনারি সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সম্মেলন কক্ষে এ গবেষণার বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়।

করোনার দ্বিতীয় ডেউয়ের ব্যাপক সংক্রমণ শুরুর পর চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ২৩৪ জন রোগীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের রক্তের বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে মৃত্যুঝুঁকি নির্ণয় করাই ছিল এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য।

গবেষণায় দেখা গেছে, আইসিইউতে ভর্তি ২৩৪ জন রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন মারা যান। সুস্থ হয়ে ফিরে যান ৭৮ জন। মারা যাওয়া ৭৩ শতাংশ রোগীর বয়স পঞ্চাশের বেশি। তাদের মধ্যে ১৩৯ জন অর্থাৎ ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় আগে থেকেই ভুগছিলেন। আবার এদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রোগীর একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতা ছিল যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানির মতো সমস্যা। সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিইউতে মারা যাওয়া ৭৫ দশমকি ৫ শতাংশ রোগীর রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মারা যাওয়া ৭৩ শতাংশ রোগীর রক্তে অক্সিজেনের চাপ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে গড়ে ৫০ দশমিক ৪ মিলিমিটার কম। স্বাভাবিক মাত্রা ৭০ থেকে ৯০ মিলিমিটার।

ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. ইসমাইল খান এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। ভিসি গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্ত রোগীদের রক্তে শ্বেতকণিকা, হিমগ্লোবিন, অক্সিজেনের চাপ, সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন, ফেরিটিন, ডি-ডাইমার এবং ট্রপোনিন এসবের মাত্রা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এসব উপাদান কোন মাত্রায় থাকলে বা বেড়ে গেলে কিংবা কমে কোন মাত্রায় পৌঁছালে রোগী মারা যাচ্ছে, সেটি আমরা যাচাই করে দেখেছি। গবেষণার মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি আছে অথবা মৃত্যুঝুঁকি নেই এমন মাত্রা নির্ধারণ করেছি। এটা ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দেবে। এখন এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা বসে তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবেন।
সমীক্ষায় আরও যুক্ত ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাজদ্বীপ বিশ্বাস ও মৌমিতা দাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রফেসর ইফতেখার আহমেদ, সিভাসুর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, মলিকিউলার বায়োলজিস্ট প্রণেশ দত্ত ও তানভির আহমেদ নিজামী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন