অ্যাজমা বা হাঁপানি- দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং সংবেদনশীলতায় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, একে বলে হাঁপানি বা অ্যাজমা। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট এমন একটা রোগ যার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও প্রধানত ২টি কারণকে এর জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এ ২টি হলো- ১. ‘এটোপি’ বা বংশগত ও ‘এলার্জি’ যা পরিবেশগত উপাদান ২. শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা। বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটি লোক অ্যাজমায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। যার মধ্যে ৪০ লাখই শিশু। ৬৫% মানুষের আক্রান্ত হবার কারণ এলার্জি। যুবক বয়সে অ্যাজমা আক্রান্তের হার ১৫%।
অ্যাজমা রোগের লক্ষণ- শ্বাসকষ্ট, সাথে শুকনো কাশি। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো সাঁ সাঁ শব্দ। হঠাৎ দমবন্ধ ভাব অনুভব করা। ধুলোবালি বিশেষভাবে ঘরের ধুলো, ঠান্ডা কিংবা গরমের কারণে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট। ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট। বিটাব্লকার বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খেলে শ্বাসকষ্ট।
অ্যাজমা রোগের চিকিৎসা- চিকিৎসার জন্য দরকার প্রথমেই রোগ নির্ণয়। রক্ত পরীক্ষায় বিশেষত ইয়োসিনোফিল এবং সিরাম আইজিই-এর মাত্রা বেশি আছে কিনা দেখা হয় অ্যাজমা নির্ণয়ে। এবং এলার্জির জন্য স্কিন প্রিক টেস্ট করা হয়। এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন এলারজেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর এলার্জি আছে তা ধরা পড়ে। বুকের এক্স-রে করে দেখা হয় যে অন্য কোনো কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট কি না তা জানতে।
কিছু কিছু বিষয়ে সচেতনতা হাঁপানি থেকে দূরে রাখে। ১. এলার্জেন পরিহার- অ্যাজমার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো যে জিনিসে এলার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই অ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার তার কিসে কিসে এলার্জি হয়। ২. ওষুধপত্র- অ্যাজমার নানা ধরনের ওষুধ আছে। প্রয়োজনমতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন। ৩.এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি- এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ব্যবহার করা অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এজমার অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করে। এটাই অ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়।
শীতের অসুখ অ্যাজমা থেকে বাচতে সতর্কতা-
* এলার্জিকারক বস্তু এড়িয়ে চলুন। যেমন- ধুলো, বালি, ঘরের ঝুল, ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
* ঘর বাড়িকে ধুলো বালি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা। এজন্য দৈনিক অন্তত একবার ঘরের মেঝে, আসবাপত্র, ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করা।
* ঘরে কার্পেট রাখবেন না।
* বালিশ, তোষক, ম্যাট্রেসে তুলা ব্যবহার না করে স্পঞ্জ ব্যবহার করা।
* শীতকালে যথা সম্ভব গরম পানিতে গোসল করা।
* ধূমপান করবেন না।
* যেসব খাবারে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা পরিহার করে চলুন।
* ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবেন না।
* মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তাকে ইতিবাচক মনোভাবে মানিয়ে চলুন। কিংবা মানসিক চাপের কারণকে এড়িয়ে চলুন।
* পেশাগত কারণে অ্যাজমা হলে চেষ্টা করতে হবে স্থান কিংবা পেশা পরিবর্তনের।
* পরিশ্রম কিংবা খেলাধুলার কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়লে চেষ্টা করতে হবে পরিশ্রমের কাজ কম করতে।
* সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করবেন। ইতিবাচক মন আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।
* রেণু পরিহারে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় বাগান এলাকায় কিংবা শস্য ক্ষেতের কাছে যাবেন না।
* রেণু এলাকা থেকে বাসায় ফিরে মাথার চুল ও কাপড় ধুয়ে ফেলুন।
* কুকুর বিড়াল বাগান থেকে রেণু বহন করতে পারে। এজন্য নিয়মিত কুকুর বিড়ালকে গোসল করানো প্রয়োজন।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট।
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন