বর্ণিল উৎসবের মধ্যদিয়ে গত শনিবার শুরু হয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নেতা-কর্মীদের আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিজ নিজ এলাকায় কতজন দরিদ্র ও গৃহহারা মানুষ আছে, কাদের ঘরবাড়ি নেই, ঠিকানা নেই, নিঃস্ব, রিক্ত, কারা হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী তাদের ঠিকানা তৈরি করুন। তারা জীবনে যেন বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে দেব। তারাও দেশের নাগরিক, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে দলীয় নেতা-কর্মী, কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ জনগণের সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্য, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের সব নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা যদি এই কাজটা ভালোভাবে করতে পারি তাহলে বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ৯৭ ভাগ ছিল। আমরা ২২ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে। সন্ত্রাসকে কখনো আমরা প্রশ্রয় দেব না। এর বিরুদ্ধে সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। বাংলাদেশের ভূখ- কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া হবে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের এ নীতির আলোকে দ্বিপক্ষীয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থেকে দলটির আগামী নির্বাচনের একটি রূপরেখা আসতে পারেÑ এমন সম্ভাবনার কথা বিশ্লেষকরা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর অনেকেই একে যেমন নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তেমনি এসব ঘোষণায় আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী সঙ্গত বিবেচনা থেকেই জাতীয় নানাদিক তুলে এনেছেন। তিনি তার প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে রোজ গার্ডেনে দলটি গঠন থেকে দীর্ঘ ৬৭ বছরে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিহত-আহতসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর অবদানের কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেছেন। সরকারের বর্তমান উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী ’৪১ সাল পর্যন্ত দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কী করতে চায় তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, কূটনীতি, জলবায়ু, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, তথ্য-প্রযুক্তি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদদমন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কী করতে চায়, সেসব পরিকল্পনাও তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস দূরীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ কোন দরিদ্র দেশ ছিল না। বিদেশিদের শোষণ-বঞ্চনা এবং শাসক শ্রেণীর লুটপাটের কারণেই দারিদ্র্য এ দেশে স্থায়ীরূপ লাভ করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত ৩০ বছরে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। চরম দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নিম্নমধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর একটি দারিদ্র্য মুক্তদেশ গঠনের অঙ্গীকার অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। কাজেই এ লক্ষ্য অর্জনে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ঠেকানোসহ ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সমানভাবে এগিয়ে নেয়াও অপরিহার্য। টেকসই উন্নয়নে এসব পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের অন্যতম পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল। এবারের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জনমনে ব্যাপক আশা সঞ্চারিত হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ ও রাজনৈতিকদলের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। গত কিছুদিনে চীনের সাথে বিশাল অংকের বিনিয়োগ চুক্তি ছাড়াও বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল বাংলাদেশকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এসব চুক্তি ও সহযোগিতা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ ক্ষেত্রে যে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, তা কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করাও জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার সফল বাস্তবায়নে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, দেশবাসীর এটাই প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন