বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফাইভজিতে বাংলাদেশ : প্রাপ্তব্য সেবা আগে নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

বাংলাদেশ ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছে। গতকাল পঞ্চম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে ফাইভজির শুভযাত্রা সূচিত হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিবিকাশের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় অগ্রগতি। অবশ্য পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত কয়েকটি এলাকায় টেলিটকের মাধ্যমে এই সেবা চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তীতে সারাদেশে ফাইভজি চালু হবে। তখন অন্যান্য মোবাইল অপারেটরও সেবা দেয়ার সুযোগ লাভ করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মানুষ ফোরজি সেবা লাভ করেছে। বর্তমানে সারাদেশে ৮২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০র অধিক ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা মানুষ গ্রহণ করছে। মোবাইল ফোন দিয়ে ইন্টারনেট মাধ্যমে তারা এ সেবা পাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে। শুধু শহরে নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ ও প্রশ্নের শেষ নেই। ইন্টারনেটের প্রাপ্যতা, গতি, মাসুল ইত্যাদি নিয়ে তাদের অভিযোগ অনেক। খোদ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি’র ড্রাইভ টেস্টে নিন্মমানের সেবার চিত্র উঠে এসেছে। এ সম্পর্কিত এ খবরে বলা হয়েছে, মোবাইল সেবার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফোরজি ইন্টারনেট সেবা যদি টুজির মতোও না হয়। সেবাগ্রহীতাদের যদি পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয় তবে ‘জি’ বাড়ালে কোনো লাভ হবে না। মানুষকে কাক্সিক্ষত সুবিধা দিতে হলে সেবার মান বাড়াতে হবে, অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিটিআরসিকে আরো সক্রিয় ও দায়িত্বনিষ্ঠ হতে হবে।

মোবাইল ফোনের ফোরজি ইন্টারনেটের চেয়ে ফাইভজিতে দ্রুত গতিতে তথ্য ডাউনলোড ও আপলোড করা যায়। ফাইভজিতে হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হয় জিরো ডিসটেন্ট কানেকটিভিটি। ফোরজির সঙ্গে ফাইভজির পার্থক্য যে বিরাট ও ব্যাপক, এই বিশেষজ্ঞ মতামত তারই সাক্ষ্য দেয়। বলা হচ্ছে, ফাইভজি মানুষের জীবনচিত্রই পাল্টে দেবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরো বাড়বে। স্মার্ট সিটি নির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটির ব্যবহার। এছাড়া এটা বিগ ডাটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরো ব্যাপক পরিবর্তন আসবে শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে। ফাইভজি শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিক ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে ইতোমধ্যেই বিটিসিএলকে পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প-কারখানায় ফাইভজি সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য ও স্পেনে ফাইভজি সেবা চালু করা হয়েছে। সেবাকে কীভাবে আরো সহজ ও উন্নত করা যায়, তার চেষ্টাও এসব দেশ করে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফাইভজির প্রচলন হয়ে যাবে বহু দেশে। উন্নয়নশীল অনেক দেশ নিজেদের প্রস্তুত করার কাজ করে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার মানুষের জীবনধারা, উৎপাদনব্যবস্থা, যোগাযোগ, যাতায়াত, শিক্ষা-গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করে যাচ্ছে। প্রযুক্তিজাত পরিবর্তনের এই ধারা থেকে কোনো দেশ বা জনপদের মানুষেরই দূরে থাকার অবকাশ নেই। দূরে থাকা মানে পিছিয়ে পড়া। কাজেই আমাদেরও প্রযুক্তির সঙ্গে, পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি চলছে। ফাইভজির হাত ধরে এর বিকাশ-বিস্তার ঘটবে মনে করা হচ্ছে। হয়তো ফাইভজির পর আরো উন্নতমানের প্রযুক্তি আসবে, যা সূচিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে আরো গতিশীল, আরো দ্রুতায়িত করবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা ও সুফল ঘরে তুলতে আমাদের আরো সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে, দ্রুত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। ঢাকায় সদ্য শেষ হওয়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। এজন্য তিনি প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও হস্তান্তরের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া নির্বাধ হলেই কেবল উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রযুক্তি সংগ্রহে ও উদ্ভাবনে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনই শিল্পের বিকাশ সাধন করতে পারে। এজন্য গবেষণার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফল পেতে উপযুক্ত কর্মী বাহিনীর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এই কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার কাজটি ভালোভাবে করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণদের খ্যাতি আছে। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। এটা অবশ্যই আশা জাগানিয়া একটা দিক। তাই এমুর্হূতে প্রাপ্য ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি ফাইভজি সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর জোর চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন