কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের গৌড়মহন হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগমের বিরুদ্ধে তার স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে অভিভাবক সাজিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৯ শিশু শিক্ষার্থীর ভূয়া নাম ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহ সরকার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে এখনও কোনও তদন্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগম তার স্বামী জয়নাল আবেদিনকে প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর চাচা দেখিয়ে একই জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ব্যবহার করে একই মোবাইল নাম্বারে নগদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন। একইভাবে প্রধান শিক্ষক তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে জাবিরকে প্রথম শ্রেণির ৬ শিক্ষার্থীর বাবা, ভাই ও চাচা সাজিয়ে একই জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ব্যবহার করে একই মোবাইল নাম্বারে নগদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় গৌড়মহন হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকায় দেখা যায়, প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবুর ও রাশেদা এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শাহাদতের অভিভাবকের স্থলে প্রধান শিক্ষকের স্বামী জয়নালের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তা, খাদিজা,আরফিনা, দিয়া, সয়ামিনি এবং আশিকের অভিভাবক হিসেবে জাবির নামে এক ব্যাক্তির জাতীয় পচিয়পত্র ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জয়নাল ও জাবির আসলে প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগমের স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে। আর যেসব শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে সেসব নামে কোনও শিক্ষার্থী ওই স্কুলের সংশ্লিষ্ট শ্রেণিতে নেই। উপবৃত্তির তালিকায় থাকা জয়নাল আবেদিনের মোবাইল নাম্বারে ফোন দেওয়া হলে অপর প্রান্তে থাকা ব্যাক্তি নিজের নাম জয়নাল আবেদিন ও প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগমের স্বামী বলে স্বীকার করেন। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘দুইজন শিক্ষার্থীর মোবাইল নাম্বারে কী যেন সমস্যার কারণে আমার নাম্বার দিয়ে থাকতে পারে। আমি বিস্তারিত জানিনা। কিন্তু আমার নাম্বার দেয়ার কথা নয়।
তার ছেলের নাম জাবির নিশ্চিত করে জয়নাল বলেন, তার (ছেলের) নাম ও মোবাইল নাম্বার কেন ব্যবহার করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ম্যাডাম (প্রধান শিক্ষক) বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমি বাইরে আছি। বাসায় গিয়ে বিষয়টি জেনে আপনাকে জানাবো।
স্বামী ও সন্তানকে অভিভাবক দেখিযে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগম। তার দাবি, ওই ৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইল নাম্বার না থাকায় তিনি উপবৃত্তির তালিকায় তার স্বামী ও ছেলের নাম ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছেন। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে ওই শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহ সরকার জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ব্যস্ত থাকায় এখনও বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন