রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এতে করে পদ্মা পাড়ের অসংখ্য বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ট্রাক চলাচলে চরম দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর জীবন। পদ্মা নদীর পাড় কেটে বালুমাটি বিক্রির জন্য তৈরি রাস্তা বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে প্রায় ১৫ একর জমিতে অবৈধভাবে মাটি খনন করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। তাদের বালুমাটি কাটা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন গ্রামের লোকজন। সে সময় গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ এসে পাদ্মা পাড়ের অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা উপজেলার বাহিরচর ছাত্তার মেম্বারপাড়া থেকে বালুমাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক বালুমাটি কেটে গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, আমরা কয়েক দফা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এখানে এসে বসবাস করছি। এখান থেকেও মাটি কাটার কারণে অনেকেই নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমরা নিষেধ করা সত্ত্বেও এখানে প্রতি বছরই ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটা, নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এবার যেভাবে তারা মাটি কাটছে তাতে বর্ষা মৌসুমে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা নদী পাড়ের অসহায় মানুষ। এই নদীই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। নদীর পাড়ই আশ্রয়স্থল। এই আশ্রয়স্থলই আজ ধ্বংসের মুখে।
এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মোহন মন্ডল, মুসা মন্ডল, কুদ্দুস মন্ডল প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে তারা অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। এই মাটি কাটাতে আমাদের ভিটেবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর সরকারিভাবে কিছু কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তাতে কিছুটা ভিটেবাড়ি রক্ষা পায়। এবার বন্যা চলে যাওয়ার পর আবারো আমাদের ভিটেবাড়ি রক্ষার জন্য জিও ফেলানো হয়েছিল। সে ব্যাগগুলো কেটে তাদের মাটির ট্রাক যাওয়া আসার জন্য একটি রাস্তা তৈরি করে। আমরা এলাকার নারী-পুরুষ মিলে তাদের বাঁধা দেই। তারা সে বাঁধা অমান্য করে জোর করে ট্রাক যাওয়া-আসার রাস্তা বানায়। দিনরাত ট্রাক চলাচল করায় ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করতে পারে না। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না।
এ বিষয়ে এলাকার ইউপি সদস্য কাশেম শেখ জানান, মুসা মন্ডল, কুদ্দুস মন্ডলসহ আরো অনেকেই এই অবৈধ মাটিকাটার সাথে জড়িত। তাদের অনেক বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারা অগ্রাহ্য করে জোর মাটি কাটতে থাকে। পরে এলাকার চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করি। মাটি কাটতে কয়েকবার বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করি। তারা বাঁধা তোয়াক্কা না করে জোর করে মাটি কাটতে থাকে। পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসিকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি সরেজমিনে এসে মাটি কাটা বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কয়েকটি মাটির ট্রাক আটক করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোহন মন্ডল জানান, আমার দাদার রেকর্ডিয় ১৩ একর জমি থেকে আমরা মাটি কেটে বিক্রি করছি। এটা পদ্মা নদী বা সরকারি কোন সম্পত্তি নয়। এছাড়া ট্রাক যাতায়াতের জন্য যে পথ তৈরি করা হয়েছে, সেখানেও যার যার জমি ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে টাকা প্রদান করা হয়েছে। এখানে অবৈধ কিছু করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, এ অঞ্চলটি একটি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। প্রতি বছরই নদী ভাঙন হয়। এই নদীর পাড়ের মানুষও নদী ভাঙনের শিকার। এলাকায় কিছু ভূমিদস্যু আছে। যারা বালু ব্যবসা করে। মূলত তারা নদীর পাড়ে বাড়িঘরের পাশ দিয়ে সরকারিভাবে ফেলানো জিও ব্যাগ কেটে অবৈধভাবে মাটির ট্রাক চলাচলের রাস্তা তৈরি করে। এভাবে গাড়ি চলাচল করলে বাড়িঘরগুলো থাকবে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করি ও মাটির ট্রাক যেন চলাচল করতে পারে সে কারণে রাস্তাটি বন্ধ দেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন