স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা বুস্টার ডোজের বিষয়ে কাজকর্ম করছি। ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনারদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে। বুস্টার শুরুর আগে আমাদের সংখ্যাটি নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও আরো কিছু কাজকর্ম আছে। এই মুহূর্তে আমরা সুরক্ষা অ্যাপটিকে আপগ্রেডের কাজ করছি।
গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। করোনা হাসপাতাল যেগুলো ছিল, সেগুলোকে যেভাবে আমরা প্রস্তুত করেছিলাম, সেগুলো সে অবস্থাতেই আছে। বরং ওমিক্রন মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে আপগ্রেড করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের টিকা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। ৩০ কোটি ডোজ টিকা এরইমধ্যে সংগ্রহ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ৪ কোটি ডোজ এখনো মজুদ আছে।
করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে যদি সবাই নিজ থেকে সতর্ক না হই, তাহলে এটিকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ হলো আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিদেশে আসা-যাওয়া করছে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আমাদের দেশে আসছে। কাজেই আমরা যদি নিজেরা সতর্ক না হই, তাহলে ওমিক্রন ঠেকিয়ে রাখা খুবই কঠিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড এডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সহযোগী প্রফেসর ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, দেশে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন ব্যক্তি কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে প্রতি একশ জনের মধ্যে ২৫ জন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হার বেড়েই চলেছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। এমনকি এই মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৯২ শতাংশই নানা কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
মূল প্রবন্ধে তিনি জানান, বাংলাদেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। বেকারত্ব, হতাশা, অস্থিরতা, ব্যক্তিজীবনের অনিয়ম, বিশৃংখলা, নানামুখী চাপ, অপ্রাপ্তি, লোভ ও বিচারহীনতা তরুণদের মানসিক রোগীতে পরিণত করছে বলেও এই চিকিৎসক জানান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আর দেশে গুরুতর মানসিক রোগীদের মাঝে ৪২ শতাংশই কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিন্ডের সমস্যা, ব্রেইন টিউমার, লিভার, কিডনি ও হার্টফেল অন্যতম।
এতে আরও বলা হয়, করোনাকালীন মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি করোনার প্রথম বছরেই সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।
জানা গেছে, বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন। যার ৫০ শতাংশই শুরু হয় ১৪ বছর থেকে। সারাবিশ্বে মৃত্যুর এক দশমিক ৩ শতাংশ হলো আত্মহত্যা। যেখানে তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হলো মানসিক সমস্যা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বার্ন জং রানা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. রোবেদ আমিন প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন