রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বগুড়ায় প্লাস্টিক কারখানায় আগুন : পাঁচ শ্রমিক ছাই

তদন্ত কমিটি গঠন

মহসিন রাজু, বগুড়া / মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে একটি প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সান্তাহার পৌর শহরের হবির মোড় এলাকায় এ অগ্নিকান্ডে ফ্যাক্টরির প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মালিক পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির পশ্চিম অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কারখানায় দাহ্য পদার্থ ও থালা তৈরির কাঁচামাল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানার শ্রমিকেরা দৌড়ে কারখানার বাইরে বের হতে থাকেন। আগুন ও প্রচন্ড ধোঁয়ায় কারখানার একটি কক্ষে পাঁচ শ্রমিক আটকা পড়েন। পাঁচজনই দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তারা একটি কক্ষে আটকা পড়েছিলেন। আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে তারা আর কারখানার ওই কক্ষ থেকে বের হতে পারেননি। আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের চেহারা এত বিকৃত হয়েছে যে দেখে চেনার উপায় নেই।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাদের বীভৎস লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আর কেউ দগ্ধ ও হতাহত হননি। লাশ উদ্ধারের সময় স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। কারখানার শ্রমিক শাহাজাহান আলী, শিহাব হোসেন ও আবদুল খালেকের পরিবারের সদস্যরা লাশ দেখার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু লাশ দেখে শনাক্তের উপায় নেই।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সান্তাহারের হবির মোড়ের ঐ কারখানায় ওয়ান টাইম প্লেট, গ্লাস, বাটি তৈরি হতো। আর্থিকভাবে লাভজনক এই কারখানায় ঠিক কী কারণে এতবড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

কারখানার মালিক ও সান্তাহার পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু অগ্নিকান্ডের বিবরণ দিয়ে জানান, গতকাল সকালে ৪৫ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টায় মেশিন চলা অবস্থায় অগ্নিকান্ডের সূচনা হয়। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের এডি আব্দুল মালেক বলেন, অগ্নিকান্ডের খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টাব্যাপী ফায়ার সার্ভিসের বগুড়া ও নওগাঁর ১৩টি ইউনিট একযোগে কাজ চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৫ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ফ্যাক্টরি মালিক জানান, ২০ কোটি টাকার মেশিনারিজ ও মালামালসহ ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আদমদীঘি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। তবে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আগুন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নওগাঁ ও বগুড়া থেকে আলাদা ইউনিট এসে একযোগে কাজ করে আগুন নেভানো সম্ভব হয়। তিনি আরো জানান, আগুন নেভানোর পর কারখানার ভেতরে পাঁচজনের লাশ পাওয়া গেছে। আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন জানান, নিহত ৫ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি। ঘটনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলকারখানা পরিদর্শকসহ কয়েকজন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, আগুনে পাঁচজনের মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন