শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার

বিজিবি সদস্য হত্যা

বিশেষ সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় বিজিবির এক সদস্যকে হত্যার ঘটনায় মূলহোতা ও প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তার নাম মো. মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিক। মারুফ জাতীয় পার্টি থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২৮ নভেম্বর দেশব্যাপী ৩য় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ থানাধীন গড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় বিজিবির নায়েক রুবেল হোসেন নির্মমভাবে নিহত হন। এ ঘটনায় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ললিত চন্দ্র রায় বাদী হয়ে গত ৩০ নভেম্বর ৯৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে গত সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় থেকে প্রধান আসামি মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিককে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মারুফ ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য দেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মারুফ হোসেনের বাবা মৃত মোসাদ্দেক হোসেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন। মারুফ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার নির্বাচনী মূল্যায়ণ অনুযায়ী নির্বাচনে জয়লাভ করতে তার স্থায়ী এলাকার গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় সব ভোট প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে তিনি এই কেন্দ্রের প্রায় সব ভোট তার অনূকূলে যেন হয় এজন্য পেশীশক্তি ব্যবহার করবে বলে পরিকল্পনা করে। মারুফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই কেন্দ্র দখল ও প্রয়োজনে হামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট চলাকালীন বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে তার পক্ষের ২০/৩০ জন সমর্থক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে অনাধিকার প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করে। ভোটকেন্দ্রের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করলে তারা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। পরবর্তীতে প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মোবাইলে ঘটনা অবহিত করলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ টহল দল ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ স্বাভাবিক করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে ভোট গণনা শুরু করা হয়। কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৯৭১ ভোটের মধ্যে গ্রেফতার প্রার্থীর পক্ষে ২ হাজার ৩৩৬ ভোট ও অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী যথাক্রমে; ৭০টি ও ৬টি ভোট পায়। এরই মধ্যে অন্য ৮টি কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের তুলনায় সামান্য পিছিয়ে থাকায় সে ফলাফল পরিবর্তনের জন্য (সম্পূর্ণ ভোট তার পক্ষে দেয়ার জন্য) প্রিজাইডিং অফিসারকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার অপারগতা প্রকাশ করলে মারুফসহ তার প্রায় শতাধিক সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার, অন্যান্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে আহত করে। এসময় নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সরকারি যানবাহন ও নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এরপরে রাত সাড়ে ৮টার সময় বিজিবি টহল দল উপস্থিত হলে গ্রেফতারকৃত মারুফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর জখমের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
মারুফের বিরুদ্ধে এর আগে কোনো মামলা ছিল কি-না জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার নামে কোনো মামলা নেই। তবে তিনি এলাকায় প্রভাববিস্তার করার চেষ্টা করতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন