শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গৌরবময় বিজয় ও স্বপ্নের বাংলাদেশ

আব্দুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:১৪ এএম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম করছি আমরা। দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে অগণিত রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে এই জাতিকে অগ্রসর হতে হয়েছে। বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার লক্ষ্য পূরণের অভিপ্রায়, অবিচার ও শোষণ থেকে মুক্তি এবং জাতিগত অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার সেই লড়াই নিষ্কণ্টক ছিল না। অসংখ্য নেতাকর্মীর কারাবরণ, পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হয়েও দমে না যাওয়া, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যয়দৃঢ় পূর্বসূরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে অর্জন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। একটি নিরস্ত্র জাতিকে প্রগাঢ় দেশপ্রেমের দীক্ষা দিয়ে সশস্ত্র ও সুসংগঠিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে মানসিক শক্তি ও দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিতে পেরেছিলেন, তৎকালীন বিশ্ববাসীকে তা বিস্মিত করেছিল। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে এই বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আনত মস্তকে হৃদয়ের গভীর থেকে শ্রদ্ধা জানাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সকল সহকর্মী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি। গভীর শ্রদ্ধা জানাই সকল নির্যাতিত নারীদের প্রতি। যে মা তাঁর সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন, যে মা সন্তান হারানোর তীব্র ব্যথা বুকে নিয়ে আমৃত্যু কেঁদে গেছেন, যে পিতা সজ্ঞানে দেশমাতৃকার জন্য তাঁর পুত্রকে উৎসর্গ করেছিলেন, যে স্ত্রী তাঁর স্বামী হারানোর যন্ত্রণা আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন, যে বোন তাঁর স্নেহশীল প্রিয় ভাইকে হারিয়েছেন- তাঁদের সকলের যন্ত্রণার পটভূমিতে এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম।

পাকিস্তানিদের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির বিকল্প বাঙালি জাতির কাছে আর কিছু ছিল না। সেই উপলব্ধি থেকেই ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা উত্থাপন করেছিলেন। সেই ৬ দফাকে উপজীব্য করে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও লড়াই, তার সবই ছিল স্বাধীনতার স্থির লক্ষ্য নির্ধারণ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ থেকে মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধুর কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছিল তারও অনেক আগেই। একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি ক্রমান্বয়ে সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন। কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মণি সিংহ বঙ্গবন্ধুর ৫৩তম জন্মদিনের আলোচনা সভায় বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫১ সালে কারাগারে থাকাকালেই স্বাধীনতার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যমে তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সেমিনারে মণি সিংহ বলেন, যদিও আমাদের মতপার্থক্য ছিল, তথাপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কাছে এটা জানতে চেয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামকে তিনি (মণি সিংহ) সমর্থন করবেন কিনা। তিনি বলেন, ১৯৬২ সালে সামরিক আইনের আওতায় পড়ে তিনি যখন জেলে অন্তরীণ, তখনও আমার সাথে যোগাযোগ হয়েছিল তাঁর প্রতিনিধির। (সূত্র : দৈনিক সংবাদ, ১৮ মার্চ ১৯৭২)

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর বিগত ৫০ বছরে জাতি হিসেবে অনেকদূর অগ্রসর হতে পারতাম। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে তারা আবারও পাকিস্তানি ভাবাদর্শে নিয়ে যাবার অপচেষ্টা চালায়। ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার সুযোগ পায়। তারপর ২০০১ সাল থেকে জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট ও হত্যা-সন্ত্রাসের কালো অধ্যায়কে অতিক্রম করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দুরন্ত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পর সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ১০টি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সেদিনের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়ার চিত্রটি লক্ষণীয়। নিউইয়র্কভিত্তিক একটি জনপ্রিয় বিজনেস পোর্টাল কোয়ার্টজ ডটকম বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে অগ্রসরমান এশিয়ার অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ ২০২০ এবং ২০২১ এই বছরেই যাদের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশের বেশি। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উঠে আসার ক্ষেত্রে মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের অন্তত দুটি পূরণ করতে হয়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে তিনটি সূচকের সব কটি পূরণ করে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে। যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে জানায় ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে। এছাড়া অন্যান্য অর্থনৈতিক জরিপের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৪৩ সাল নাগাদ ২১তম শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হতে যাচ্ছে।

মাথাপিছু আয়ের হিসাবে চার বছর আগেই আমরা পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৬৫২ ডলার। ওই একই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫১ ডলার। পরের বছর তা আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ মার্কিন ডলার যা গতবছর ছিল ২২২৭ মার্কিন ডলার। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে বর্তমানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৫৪৩ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পাকিস্তানের তুলনায় যোজন যোজন এগিয়ে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকেও পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের বর্তমান মাথাপিছু আয় ১৯৪৩ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, চলতি বছরে পাকিস্তানকে আরও একটি সূচকে পিছনে ফেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও চলতি বছরে তা ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নতির হিসাবে পাকিস্তান এবং ভারত দুদেশকেই পেছনে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন তারকার তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।

করোনা মহামারির আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা বিশ্বে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ছিল অন্যতম। মাথাপিছু জিডিপিতেও পাকিস্তানকে তিন বছর আগে পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসেবে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকেও পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। সামাজিক বিভিন্ন সূচকে গত দশ বছরে ভারতকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ। শিক্ষার হার কিংবা গড় আয়ুর দিক থেকে পাকিস্তান থেকে আমরা অনেকটা এগিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর, ভারতে ৬৯.৪ এবং পাকিস্তানে ৬৭.১ বছর। যদিও শিক্ষার হারের দিক থেকে ভারত থেকে আমরা সামান্য একটু পিছিয়ে আছি। ভারতের ৭৪.৪%-এর বিপরীতে বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭৩.৯% যেখানে পাকিস্তানে শিক্ষার হার মাত্র ৫৯.১৩% ! এছাড়া বিভিন্ন রিপোর্ট সমীক্ষা অনুযায়ী অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভারত কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের থেকে ভালো।

পোশাকশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় গত ১০ বছরে আমাদের রপ্তানির চিত্র বদলেছে। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৮.৬% রপ্তানি বেড়েছে। যেখানে বিশ্বে গড় রপ্তানি বেড়েছে ০.৪% মাত্র! এমন সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণের দিক থেকে পাকিস্তানের তুলনায় তিনগুণ এগিয়ে বাংলাদেশ। করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবার ৪১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকও পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক সূচক যেমন শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, জন্মহার, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ২ শতাংশ। এছাড়া প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে বাংলাদেশে মারা যায় ২২ জন, আর পাকিস্তানে মারা যায় ৬১ জন শিশু। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাধীনতার পরের ৩০ বছর অনেক সূচকেই পাকিস্তানের অবস্থান ছিল বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ। এরপর থেকে ব্যবধান ক্রমেই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আর বর্তমানে সব সূচকেই পাকিস্তানের থেকে আমরা এগিয়ে রয়েছি। নানা প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে রপ্তানি, রিজার্ভ, জিডিপি থেকে শুরু করে দেশের বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়নে সাফল্য এসেছে। এসব সূচকে পাকিস্তানকে পিছনে ফেলা সম্ভবত যুদ্ধের ৫০ বছরে বাংলাদেশের সব থেকে বড় অর্জন।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। দ্রুতগতিতে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প ও একশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে সরকারের এই মেয়াদেই দেশের মানুষ এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই দশ মেগাপ্রকল্প নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সরকারের গৃহীত এই দশ মেগাপ্রকল্প হচ্ছে- পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

এই দশ মেগা প্রকল্পের বাইরেও ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) তৈরি হলে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রফতানি আয় সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এই ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ মহাসড়ককে চারলেন ও ছয়লেনে রূপান্তর দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হচ্ছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।

বিজয়ের ৫০ বছরে বহু ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে আজকের বাংলাদেশের অবস্থান নিঃসন্দেহে গৌরবের। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার ধারণ করে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত গন্তব্যে খুব দ্রুতই পৌঁছতে সক্ষম হবে, এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা- সংবিধানের এই চার মূল স্তম্ভকে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের আলোকিত ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি ও মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত প্রজন্মের হাত ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে এই বাংলাদেশ অচিরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠবে।

লেখক: সভাপতিম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন