রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষমুক্ত শিম উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন বগুড়ার চাষিরা। এর ফলে জনস্বাস্থ্যও সুরক্ষিত থাকছে। সেই সাথে আনুপাতিক হারে উৎপাদন খরচ কমছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। শিমের জন্য চরম ক্ষতিকর জাব পোকা দমনে ব্যবহার হচ্ছে উজ্জল হলুদ রঙের ছোট ছোট আঠালো ফাঁদে বিষাক্ত স্প্রে ছাড়াই নিধন হচ্ছে জাব পোকা। আর শিম আকারে বড়, পরিপুষ্ট ও মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যকর।
সম্প্রতি দক্ষিণ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বড় ফুলবাড়ি গ্রামের সবজি পল্লীতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে এবং বাজারে তার আলাদা চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের কোলঘেঁষে করতোয়া নদীর পূর্বে বড় ফুলবাড়ির সবজি পল্লীতে চারিদিকে শুধু ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটোসহ সব ধরনের শীতের সবজিতে ভরপুর।
আশরাফ আলী, আব্দুল হামিদ, খলিলুর রহমান ও আব্দুল মান্নানের ৭ বিঘা জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের গাজীপুর কীটতত্ত্ববিভাগের অর্থায়নে এবং বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপনায় জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের অধীনে শিমের চাষ হয়েছে। অগ্রহায়ণে শুরু হয়েছে শিম আহরণ ও বিক্রির কাজ। চলবে আগামী চৈত্র পর্যন্ত।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা জানান, সপ্তাহে ২ দিন শিম তুলতে হয়। প্রতিবার গড়ে বিঘাপ্রতি শিম ওঠে ৪ মন হিসেবে সপ্তাহে ৮ মন এবং মাসে ৩২ মন। বর্তমানে বাজার দর অনুপাতে মাসে বিঘাপ্রতি আয় আসে গড়ে ৩৫ হাজার টাকা। মোটামুটি ৬ মাসে গড়ে ২ লাখ টাকার সমপরিমানে শিম বিক্রি করা যায়। চাষিরা আরও জানান, শিমের চারা রোপন , জাংলা তৈরি, সেচ, শ্রম ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটত্ত্ববিদ জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ছাড়াও যে সবজির উৎপাদন সম্ভব তার উদাহরণ এই শিমের ক্ষেত। এর প্রাথমিক সাফল্য উৎসাহজনক। শিমের জন্য জাব পোকা ভীষণ ক্ষতিকর। কীটনাশকের বদলে কাঠি বা লাঠির মাথায় ছোট ছোট হলুদ রঙের প্লাষ্টিকের মগ ঝুলিয়ে মগের বাইরের দিকটা আঠালো মবিল মাখিয়ে রাখলে হলুদের আকর্ষণে জাব পোকা সেখানে লেপ্টে মারা পড়ে এবং রক্ষা পায় শিম। তার মতে, কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি চাষি পর্যায়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শুভ লক্ষণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন