রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

নিঃশ্বাস বলে শরীরের কথা

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি ধারনা দিয়ে থাকে। যদি আপনি ঘুমের সময় নাক ডাকেন বা মুখ খুলে অর্থাৎ হা করে ঘুমান তাহলে আপনার মুখের অভ্যন্তর ভাগ শুস্ক হয়ে যাবে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। দাঁতের ফাকে খাদ্য কনা থাকলে তা ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। মুখ হা করে ঘুমালে পেরিওডন্টাল তথা মাড়ির রোগ দেখা দিতে পারে। আপনি যদি উপুড় হয়ে ঘুমান তাহলে নাক ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই একপাশ হয়ে ঘুমালে সমস্যার সমাধান হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ ও ফ্লস করে ঘুমাবেন।

জেনে নেই নিশ্বাসে কেমন গন্ধ কি ইঙ্গিত করে:
নিশ্বাসের সাথে ধাতব গন্ধ: যদি আপনার নিশ্বাসের সাথে ধাতব গন্ধ বা মেটালিক স্মেল পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মাড়ির নিচে ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তার করছে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। শুধু তাই নয় সংক্রমন পর্যন্ত হতে পারে। ধুমপান ত্যাগ করার পাশাপাশি নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করুন।

১. নিশ্বাসের সাথে টক গন্ধ: যদি আপনার নিশ্বাসের সাথে টক গন্ধ পাওয়া যায় এবং সামান্য খাবার বা তরল উপরের দিকে উঠে আসে তবে বুঝতে হবে পাকস্থলি থেকে এসিড ভুল পথে অর্থাৎ উল্টা পথে গলা হয়ে মুখে চলে আসছে যাকে ডাক্তারি ভাষায় গেস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা সহজ ভাষায় এসিড রিগারজিটেশন বলা হয়। এ এসিড গলা এবং মুখের অভ্যন্তরে আলসারের মত মারাত্মক ক্ষত তৈরী করতে পারে।

২. নিশ্বাসের সাথে ফলের গন্ধ: যদি আপনার নিশ্বাস হয় ফ্রুটি ব্রেথ অর্থাৎ ফলের মত গন্ধ পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে বুঝা যায় আপনার শরীর জ্বালানী হিসাবে সুগারের পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করছে। এর অর্থ আপনার শরীরে ইনসুলিন হরমোনের পরিমান কম আছে বা কমে যাচ্ছে এবং এধরনের ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৩. ষ্টিংকি বা দুর্গন্ধযুক্ত নিশ্বাস হলে: হ্যালিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা যদি পাকস্থলির আলসার বা ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে অস্বস্তিকর দুর্গন্ধযুক্ত বা ষ্টিংকি নিশ্বাস হয়ে থাকে। এর সাথে বমি বমি ভাব, হার্ট বার্ন, পাকস্থলির ব্যথা এবং বদ হজম হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ এন্টিবায়োটিক সেবন করলে এসব অবস্থা থেকে পরিত্রান লাভ করা সম্ভব।

৪. নিশ্বাসে দুর্গন্ধ পেলে: ঠান্ডা, কফ এবং সাইনাস সংক্রমন ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত মিউকাস নাকে এবং মুখে প্রেরণ করতে পারে। এর ফলে নিশ্বাসে সমস্যা এবং গন্ধ হতে পারে। ঠান্ডা বা কফ চলে যাওয়ার পর এ ধরনের পরিস্থিতি আর থাকে না।

৫. ঔষধজনিত সমস্যা: কিছু ঔষধ মুখকে শুস্ক করে ফেলে এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে থাকে। এর ছাড়া নাইট্রেট জাতীয় ঔষধ যা হার্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, ঘুমের ঔষধের কারনে কিছু কিছু রাসায়নিক নি:সৃত হয় যা আপনার নিশ্বাসকে গন্ধযুক্ত করতে পারে যখন তা আপনার শরীরে বিভাজিত হয়ে থাকে। বেশি ভিটামিন খেলেও এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

৬. শুস্ক মুখ এবং সংক্রমন: টনসিলের সংক্রমনের কারনে নিশ্বাসে গন্ধ হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারনে মুখের অভ্যন্তর ভাগ শুস্ক হয়ে যায়। মুখে পর্যাপ্ত লালা থাকে না যা নিয়মিত মুখের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বস্তুকে পরিস্কার করে থাকে। ফলে নিশ্বাসে খারাপ গন্ধ হতে পাারে। মুখে কোনো সংক্রমনের যথাযথ চিকিৎসা না করলেও নিশ্বাসে গন্ধ হতে পারে।

৭. লিভার ফেইলিউর হলে: লিভার ফেইলিউর বা অকার্যকারীতায় মোলডি বা অস্বস্তিকর গন্ধ হতে পারে যা ডাক্তারেরা ফিটর হেপাটিকাস নামে ডাকে। ডাইমিথাইল সালফাইড-এর জন্য এ ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। এটি একটি লক্ষন যেখানে লিভার ঠিক মত কাজ করতে পারছে না। কারন লিভারের রোগটি অগ্রসরমান অবস্থায় আছে। এছাড়াও মারাত্মক মাত্রার জন্ডিসে এমনটা হতে পারে।

৮. অ্যামোনিয়ার মত গন্ধ: অগ্রসরমান কিডনি রোগে মুখের লালায় যদি ইউরিয়া জমা হয় তখন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় অ্যামোনিয়ার মত গন্ধ পাওয়া যায়।

৯. মাছের মত গন্ধ: এন্ড ষ্টেইজ রেনাল ফেইলিউর এর ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় মাছের ন্যায় গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।

অতএব আপনার নিশ্বাসে অস্বাভাবিক গন্ধ পেলে তা গুরুত্বের সাথে গ্রহন করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করবেন। প্রাথমিক অবস্থায় অনেক জটিল রোগের চিকিৎসাও সহজে হয়ে থাকে।

ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন