প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা বেশি নির্যাতিত হয়। এ ধরনের নির্যাতন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। সরকার নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। নিয়ম বহির্ভূত ও অনৈতিক অভিবাসনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গন্তব্য দেশের চাহিদার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর প্রেক্ষিতে এবার মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। কোন অবস্থাতেই অতীতের মতো মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন ব্যয় ৩-৪ লক্ষ টাকা হতে দেয়া হবে না। আগামী বছরের জুন এর মধ্যে ৯ লাখ শ্রমিককে বিদেশ পাঠাতে সরকার কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রাক্কালে আজ শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ’ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ‘করোনার অভিঘাত উত্তরণে নিরাপদ অভিবাসন’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বোয়েসেলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন ও বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অনুষ্ঠানটি তত্ত্বাবধান করেছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল)।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অভিবাসী কর্মীরা নানা প্রতিক‚ল পরিবেশে অবস্থান করেও আমাদের দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তাদের প্রেরিত আয়ের কারণে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। আমরা বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। করোনার এই অভিঘাতের সময়ও অভিবাসী কর্মীরা দেশের অন্যান্য খাতের চাইতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছে। তাই আমরা মনে করি করোনার এই প্রতিকূলতা মোকাবেলায় অন্যান্য খাতের সাথে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আর কোন বাধা থাকবে না। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে সরকারকে এও খেয়াল রাখতে হবে দূতাবাসে সত্যায়ন, মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতি, বিএমইটির স্মার্টকার্ড ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ করার পরেও যাতে মানবপাচার আইনে কোন রিক্রুটিং এজেন্সিকে হয়রানি হতে না হয়। নিয়ম কানুন মেনে কর্মী প্রেরণ করলে মানবপাচার আইনে মামলা হবে না মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তবায়ন জরুরি।
নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন। দাবির মধ্যে রয়েছে, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের করোনার ২ ডোজ ভ্যাকসিন প্রদানের পাশাপাশি তাদের জন্য বুস্টার ডোজ টিকা প্রদান নিশ্চিত করা, আকাশচুম্বি এয়ার টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে দেশী বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করা। একইসাথে কর্মীদের জন্য লেবার ফেয়ার চালুর উদ্যোগ নেয়া, বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ করার পরও রিক্রুটিং এজেন্সীগুলো যাতে মানব পাচারের অভিযোগে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কর্মী প্রেরণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ জোরদার করে মালয়েশিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও কুয়েতের মতো ট্রেডিশনাল শ্রমবাজারগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় কর্মী প্রেরণ করার উদ্যোগ নেয়া। এছাড়া কোভিড এর কারণে যেসব অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী গ্রহণ এবং আগামী বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, প্রবাসে কারবন্দী অভিবাসী শ্রমিকদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোর মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় এর বেশি নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা উভয়ে সমান নম্বর পাওয়ায় উভয় দলকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি, ক্রেস্ট, নগদ অর্থ ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন