গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ইনকিলাব পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে। ইনকিলাব ভবনে দলটিকে স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও মার্কেটিং ডিরেক্টর মো. আব্দুল কাদের ও স্বাস্থ্য বিভাগের ডা. হক। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিরেক্টর মি. আট্টাক্রিট সিংসেনির নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মি. সারাওং সিরিবুপান ও হাসপাতালটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. কামালুর রহমান ইনকিলাবের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, চার বছর আগেও বামরুনগ্রাদের একটি দল এখানে এসেছিল। হাসপাতালটির পক্ষে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রুগীদের বিশেষ গুরুত্ব থাকার কারণেই তারা আবার এসেছেন।
এই ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং দলটি বামরুনগ্রাদ পরিবারে নতুন যোগ দিয়েছে। রুগীদের সেবার কথাটি মাথায় রেখেই তা আরও উন্নত করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা জানতেই তারা এসেছেন বাংলাদেশে। তারা ইনকিলাবে আসার আগেই ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য দুটি হাসপাতাল। এ্যাপোলো বাংলাদেশ এবং স্কয়ার হাসপাতালে তারা রুগী এবং ডাক্তার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন, কথাও বলেছেন। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা ও সেবা প্রাপ্তির যে আগ্রহ তা তাদের মুগ্ধ করেছে।
কিভাবে এদেশের মানুষের জন্য তারা আরও কাজ করতে পারেন সে ব্যাপারে পরামর্শ চান। মি. কাদের জানান, কি কি সেবা তারা দিয়ে যাচ্ছেন আর কি তাদের নতুন আসছে তা সময়ে সময়ে এদেশের মানুষকে জানালে তাদের চাহিদা আরও বাড়তে পারে। নতুন-পুরাতন সেবা এবং এটার সহজলভ্যতার বিজ্ঞাপন প্রায়ই মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। যাতায়াত এবং সহজ ভিসা প্রাপ্তির ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। ভিসা পেতে অনেক সময় লেগে যায়, আবার খুটিনাটি কাগজের কারণেও অনেককে ভিসা দেয়া হয় না। এতে রুগীরা হতাশ হয়ে অন্য বিকল্প খুঁজে নেয়। যা মোটেও কাম্য নয়। বিশেষ করে পুরান রুগীদের বিনা প্রশ্নে ভিসা দেয়া উচিত। এ পর্যায়ে মি. কামাল জানান, এর কিছু কিছু সহজ পথ আছে। তবে না জানার কারণে অনেকে এই সুযোগটা নিতে পারেন না। বামরুনগ্রাদ ডাক্তারের একাধিক সাক্ষাতের কাগজ দেখিয়ে এম্বেসি থেকে নেয়া যায় মাল্টিপল ভিসা আবার থাই এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন থেকেও নেয়া যায় রি-এন্ট্রি ভিসা। যা দিয়ে তারা বিনা কষ্টেই বার বার আসা-যাওয়া করতে পারেন। হাসতে হাসতে একথা জানাতে তিনি ভুললেন না, প্রয়োজনে আমরা সব সময়ই সাহায্যের জন্য আছি ঢাকার পান্থপথে। ভিসা থেকে শুরু করে, এন্ডোর্সমেন্ট, মুদ্রা বিনিময়, এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালে যাওয়া, হোটেল সবই আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারি। মি. সিরিবুনপান জানালেন, থাই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলে তার পরের দায়িত্ব আমাদের এয়ারপোর্ট ডেস্ক থেকেই দেয়া হয়।
ডিরেক্টর মি. সিংসেনি এবার জানালেন তাদের নতুন কিছু সেবার নতুন চিন্তাধারার কথা। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ছাড়াও দিন দিন বাড়ছে ক্যান্সারের মত রোগ। যা কোন কোন পরিবারের মধ্যে খুব বেশী বিস্তার লাভ করছে। এটাকেও সহজে নির্ণয় করার কিছু পদ্ধতি ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি খুব শীঘ্রই তাদের হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে। বলতে পারেন শুধু চিকিৎসা করে রুগীদের সুস্থ করা নয়, অসুস্থ হওয়ার আগেই আমরা তা প্রতিরোধ করতেও কাজ শুরু করেছি। আপনাদের মাধ্যমে আমি জানিয়ে রাখলাম, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ আমরা এটা শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। ইতোমধ্যেই আমরা বিখ্যাত জিই কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, লো ডোজ সিটি স্থাপন করব। এটা দিয়ে পারিবারিক ইতিহাস আছে বা সন্দেহজনক ব্যক্তিকে স্ক্যান করে আমরা প্রাথমিক অবস্থায়ই সন্দেহজনক ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারব। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের প্রয়োজনে বায়োটেকনোলজি ডিএনএ পরীক্ষা করেও রোগ ও তার প্রকার বের করা হবে। তার জন্যই প্রয়োজনীয় বিশেষ চিকিৎসা সাজান হবে যা তার রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় কাজে লাগে।
মি. সিংসেনি আরও জানালেন, আমাদের হার্ট সেন্টারে আমরা বিনামূল্যে বাচ্চাদের হৃদপিন্ডের ত্রুটি মেরামত করছি। আমরা ১০০-এরও বেশী বাচ্চাকে এই সুবিধা দিয়েছি। যা করতে এমনিতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। এতদিন শুধুমাত্র থাই বাচ্চাদের এই সুবিধা দেয়া হলেও আমরা এবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকেও বাচ্চা নিব। আমাদের হাসপাতালের খরচ কিছুটা বেশি মনে হতে পারে, তবে কেন তা অনেকেই জানেন না। আমরা আসলে ক্রিটিক্যাল কেসগুলি নিয়েই কাজ করি। সহজ চিকিৎসা কিন্তু ব্যয়বহুল নয়। আমাদের ইপি ল্যাবের কথা আপনাদের পাঠকরা ইতোমধ্যেই জেনেছেন, আমরা বাংলাদেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদেরও তা পরিদর্শন করে শেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছি। বছরের শেষের দিকে আমরা ডাক্তারদের সাথেও একটা সেমিনার করার কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছি।
এ সময় বিজ্ঞাপন বিভাগ থেকে আমাদের সবাইকে বাংলাদেশি মিষ্টি ও ফল দিয়ে আপ্যায়িত করা হল। মি. কাদের তাদের সহযোগী হতে পেরে ও ইনকিলাবের উপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। মি. সিংসেনি ও মি. সিরিবুপান ইনকিলাবের আতিথেয়তা এবং সহযোগিতার জন্য আমাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাল। আর থাইল্যান্ডে তাদের হাসপাতালের আতিথ্য এবং সেবা পরিদর্শনের জন্যও আমন্ত্রণ জানাল।
সবশেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি কামাল আজকের এই সফল আলোচনার জন্য মি. কাদেরকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রয়োজনে তিনি বাংলাদেশের যে কাউকেই নিচের ঠিকানায় যোগাযোগের উপদেশ দেন ।
স্যুট : ৩, লেভেল : ১১, ইউটিসি বিল্ডিং : ৮, পান্থপথ, ঢাকা-১২১৫। ফোন : ০১৭১৩০২৭৬২৮, ০১৭৫৫৫৫৯৬৩১, ০১৭৫৫৫৫৭৫৭৪। নঁসৎঁহমৎধফ@ফযধশধ.হবঃ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন