শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয় : সিজিএসের অনুষ্ঠানে ড. আকবর আলি খান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে অবদানের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান। স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

আকবর আলি খান বলেন, অবশ্যই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে ভারতের অবদান রয়েছে। সে জন্য আমাদের ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়। এ কথা কিন্তু ১৯৭১ সালে শোনা যেত না, স¤প্রতি উঠেছে। আমি এর সোজা জবাব দিতে চাই। ভারতও জানে, বাংলাদেশও জানে যে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ পৃথিবীর কোথাও নেই, এটা ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব নয়। এটা জাতির সঙ্গে জাতির, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব তখনই হবে যখন আমাদের স্বার্থ অভিন্ন হবে। আর যদি আমাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে সংঘাত থাকে, তাহলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ কোনো দিনই হবে না।
আকবর আলি খান বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তোমরা স্বাধীনভাবে বাঁচো সেটাই আমরা চাই। তারা কখনো এ কথা কল্পনা করেননি যে বাংলাদেশ কারও কাছে চিরপদানত হয়ে থাকবে। এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়।

আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ চ‚ড়ান্তভাবে অর্জিত হয়েছে, এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। চিন্তার কারণ হলো গণতন্ত্র নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বিশ্বাস করি উদারনৈতিক গণতন্ত্রে। এই গণতন্ত্রে শুধু নির্বাচন হলেই চলবে না, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, সেখানে নাগরিক সমাজের ভ‚মিকা থাকতে হবে, আইনের শাসন থাকতে হবে-এ ধরনের বিষয়গুলো বাংলাদেশে এখনো দুর্বল।
বাংলাদেশে তিন দশক ধরে আয় বৈষম্য বাড়ার পেছনে দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রবাহ ছাড়াও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে করেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই বৈষম্য বেড়েছে গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে। এর একটি কারণ হচ্ছে, দেশে প্রচন্ড দুর্নীতি চলছে, এই দুর্নীতির ফলে কালো টাকা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের এখানে বৈষম্য বেড়েই চলেছে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্বের ৬৫ শতাংশ দেশে বাংলাদেশের চেয়ে আয় বৈষম্য কম এবং ৩৩ শতাংশ দেশে একই পর্যায়ের বৈষম্য রয়েছে। বৈষম্য কমাতে বিশেষ দৃষ্টি দিতে নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, তা নাহলে আবার দেখা যাবে ‘বিভিন্ন ধরনের গন্ডগোল’। দেশের ‘শান্তি, অব্যাহত অগ্রগতি’ চাইলে এই সমস্যার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মত তার।
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনাকে ৫০ বছরে বাংলাদেশের ‘অকল্পনীয়’ অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকসমূহ দেখি, তাহলে অবশ্যই আমাদের গর্ব করার কারণ রয়েছে। তবে দারিদ্র্য শুধু বাংলাদেশেই কমেনি, পৃথিবীর সব দেশেই কমেছে। আন্তর্জাতিক সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ‘৪০ থেকে ৫০ শতাংশ’ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

দেশের উন্নতি হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা সমানভাবে ও সমানতালে হয়নি এবং ওঠা-নামার মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আকবর আলি খান। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে খাদ্য সরবরাহ বাড়লেও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এক সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেছিল, দেশের ৯৭ ভাগ মানুষ নাকি সুপেয় পানি পাচ্ছে, আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। আর্সেনিক-পয়জনিং এবং উপক‚লীয় অঞ্চলের পানির যে অভাব! এগুলো যদি বিবেচনায় নেন, তাহলে বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি লোক পানি পাচ্ছে না। এটা তো দারিদ্র্য দূর করার পরিস্থিতি না।

একই অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীরপ্রতীক মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে দাবি করা হয়। তিনি এর প্রতিবাদ জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর এ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:২৩ পিএম says : 0
............. India is absolute enemy of our sacred country.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন