শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সিন্ডিকেটেড বাণিজ্য ও বিস্তার রোধে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সীমান্ত পথে নানা ধরনের অসংখ্য আগ্নেয়াস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে এবং অস্ত্র চোরাচালানিরা তা দেশের সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো দিনকে দিন অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে চলেছে। মারণাস্ত্র সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়েসী সন্ত্রাসীরা অপরাধ জগতে ভিড়ছে। এভাবেই সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি ও টার্গেটেড কিলিং-এর ঘটনা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নানা নাম দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী চিরুণী অভিযান পরিচালনা করলেও লাখ লাখ অবৈধ আগ্রেয়াস্ত্রের খুব সামান্যই উদ্ধার হচ্ছে। এক রিপোর্টে জানা যায়, দেশে ৪ লক্ষাধিক অবৈধ অস্ত্র এবং ২৫ হাজার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের ৫৭টি সীমান্ত রুট দিয়ে প্রতিদিন আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্রের চোরাচালান ও ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ১৩৫টি সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পথে অস্ত্র ও মাদকের সিন্ডিকেটেড বাণিজ্য চলছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইয়াবার মতো মাদকের পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও অস্ত্র ও মাদকের বিস্তার যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে।
মাদক ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা অথবা আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। আইনের শাসন ও সন্ত্রাস দমনে পেশাগত ভূমিকার বদলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা এবং চাঞ্চল্যকর অপরাধ ও হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পর সরকারের রাজনৈতিক ব্লেইম গেমের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের সাথে এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণেও সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং সাধারণ মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা হারাচ্ছে। পুলিশের সদিচ্ছা ও পেশাগত আন্তরিক প্রয়াস থাকলে যে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে পুলিশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে, তা’ও মাঝে মধ্যেই প্রমাণিত হচ্ছে। গতকালের ইনকিলাবে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২২টি বিদেশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, শতাধিক রাউন্ড গুলি ও ৪৫টি মেগাজিন উদ্ধারসহ ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অস্ত্র উদ্ধারের সাফল্য থেকেই বোঝা যায়, পুলিশের সোর্স এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা থাকলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার সিন্ডিকেট নির্মূল ও সন্ত্রাসীদের হাতে গড়ে ওঠা অস্ত্রের মজুদ উদ্ধার করা অসম্ভব নয়।
অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায় বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই সর্ষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের সাথে অপরাধী চক্রের যোগসাজশ থাকার ফলে অস্ত্র ও মাদকবিরোধী অভিযানের আগে তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এর ফলে অপরাধীরা নিজেদের মজুদ লুকিয়ে নিজেরাও আত্মগোপনে চলে যাওয়ার কারণে পুলিশি অভিযান প্রায়শ ব্যর্থ হয়। এমনকি একশ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তাও ব্যক্তিগতভাবে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়র সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। হাজার হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ কর্মকর্তা আটক হওয়ার একাধিক নজির আছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানা এলাকায় অস্ত্র বিক্রির সময় অস্ত্র ব্যবসায়ী তপন কান্তি দে, দিদার হোসেন ও কামরুল ইসলামের সাথে ডিবি পুলিশের দুই কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাস এবং আনিসুর রহমানও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন। র‌্যাবের গোয়েন্দাদল অস্ত্রের ক্রেতা সেজে ফাঁদ পেতে এই অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের সদস্যদের হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। অপরাধীর রাজনৈতিক বা পেশাগত পরিচয়কে বিবেচনায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের পর জব্দকৃত অস্ত্র ও মাদক অফিসিয়ালি সঠিকভাবে তালিকাভুক্তির পর তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস বা সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে একশ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তাই মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে, সেখানে রাস্তাঘাটে ও গণপরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের পর সে সব অবৈধ পণ্যের পুনরায় অপব্যবহারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে দীর্ঘমেয়াদি নেটওয়ার্ক বা গোয়েন্দাজাল বিস্তৃত করা আবশ্যক। অস্ত্র ও মাদকের ভয়াল থাবা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে সীমান্ত রুটগুলোতে বিজিবি’র নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন