বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভেজাল ওষুধে সয়লাব

প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪১ পিএম, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬

হাসান সোহেল : বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশী উৎপাদিত ওষুধের সুনাম ও চাহিদা বাড়লেও দেশের চিত্র ভিন্ন। ওষুধ শিল্পের অভাবনীয় উন্নতি অথচ দেশের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে ভেজাল ওষুধে। সু-চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ভেজাল ওষুধ কিনে উল্টো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ওষুধের মান নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এক শ্রেণির ওষুধ কোম্পানি বেশি মুনাফা লাভের আসায় তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ওষুধ। এসব ওষুধ সেবন করে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগে। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে মারাও যাচ্ছে রোগী। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক সব ওষুধেই মিলছে ভেজাল। ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের এসব ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গতা, লিভার, মস্তিষ্কের জটিল রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মতে, নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দষ্ট আইনও নেই বাংলাদেশে। এ কারণে ভেজাল ওষুধের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া ওষুধ খাতের দুর্নীতি, চিকিৎসকদের কমিশনের লোভ, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরনের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা। এই অবস্থায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর তাতে মানুষও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ওপর আস্থা পাবে। যদিও বিষয়টি যার দেখার কথা সেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এ কাজে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে দেশে প্রস্তুত ভেজাল ওষুধের পাশপাশি দেশের বিমান, নৌ ও স্থল বন্দর দিয়ে ঢুকছে নকল, ভেজাল, মানহীন ও অনুমোদনবিহীন ওষুধ।
সূত্র মতে, এ বছরের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি তৃতীয়বারের মতো ছোটবড় ৮৪টি ওষুধ কোম্পানি সরেজমিন পরিদর্শন করে অধিকাংশগুলোতেই তথৈবচ অবস্থা দেখে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দেশে অর্ধশতাধিক কোম্পানিতে এখনও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে! তারা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুসারে যেকোনো ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) গাইড লাইন অনুসরণের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিলেও এখনও বহু সংখ্যক কোম্পানিতে জিএমপি গাইড লাইন অনুসরণের বালাই নেই। তবে কিছু কিছু কোম্পানি উদ্যোগী হয়ে আগের তুলনায় উন্নতি করেছে। সে সংখ্যা খুবই কম বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর আগে ২০০৯ সালের জুন-জুলাই মাসে রিড ফার্মাসিউটিক্যালস্ নামে একটি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে কিডনি বিকল হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৪ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সুপারিশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা দেখতে পান ট্যানারি শিল্পে রং হিসেবে ব্যবহৃত ডায়াথেলিন গ্লাইকল কেমিক্যাল মিশ্রিত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়েই শিশুদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর গুণগত মান সঠিকভাবে নির্ণয় ও পরিচালিত হচ্ছে কি না তা নির্ণয়ে সাব-কমিটি গঠন করে। তারা বিভিন্ন সময়ে কারখানা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। পরে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ও গতবছর সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় কমিটি গঠিত হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন সময় নাম সর্বস্ব কোম্পানিকে জেল জরিমানা করা হলেও তাদের টনক নড়ছে না। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে যাচ্ছে। তবে নিম্নমানেরসহ নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে তারা বদ্ধপরিকর বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
তবে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন কোম্পানী থেকে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসছে। ভেজালবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তাদের এসব অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে ওষুধের মান, দাম, কোম্পানি ও ফার্মেসি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি নেই বললেই চলে। এতে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধে ছেয়ে যাচ্ছে বাজার।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা একটি ভালো মানের ওষুধ কোম্পানির ওষুধকে বেছে নিয়ে নিজের মতো করে তৈরি করে তা বাজারজাত করছে। যেমন একটি ওষুধে এক চামচ চিনি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় আধা চামচ ইত্যাদি। নকল ওষুধের ক্ষেত্রে ওষুধের জেনারেশন পরিবর্তন করা হয়। বলা হলো, এটি থার্ড জেনারেশনের ওষুধ। অথচ ভেতরে দেয়া হয়েছে ফার্স্ট জেনারেশনের (প্রথম প্রজন্মের) উপাদান। এছাড়া নকল ওষুধের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ব্যাপার ঘটে। ভেজাল ওষুধ তৈরি করে অন্য কোম্পানির নামে চালানো হয়। অনেক ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রস্তুতের সরঞ্জাম হিসেবে ইটের গুঁড়া ও ময়দার সঙ্গে কিছু কেমিক্যাল মিশিয়েও তৈরি করছে নানা ধরনের ওষুধ। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপসহ প্রায় সব ওষুধই ভেজাল। অধিক লাভজনক হওয়ায় ওষুধ ব্যবসায়ীরা ওই ভেজাল ওষুধই খাওয়াচ্ছে রোগীদের। ফলে রোগীর মৃত্যুহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবণতা শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরের শিক্ষিত মানুষগুলোও প্রতারিত হচ্ছে এই সকল প্রতিষ্ঠান দ্বারা। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানিগুলো দেশের শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানীর ওষুধের নাম ব্যবহার করেও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বাজারে ছাড়ছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দু’বছর আগে ভেজাল প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার অপরাধে দীর্ঘ ২১ বছর পর আদালতের এক রায়ে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিকসহ তিনজনকে জেল-জরিমানা করা হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল সময়ের মধ্যে শত শত শিশু কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। অনেকের মতে, এ ধরণের শাস্তির ঘটনা বাড়লে কিছুটা হলেও ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরণ কমবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সতর্ক হবে।
যদিও গত আগস্ট মাসে নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন করায় ৪৪টি ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল এবং ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
অবশ্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, ওষুধের মান, দাম, কোম্পানি ও ফার্মেসি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি চলছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। যাতে কেউ ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রয় করতে না পারে। আমরা মাঝে মাঝে ফার্মেসি ও ওষুধ কারখানা থেকে এর নমুনা এনে টেস্ট করি। যদি ওষুধের মান ঠিক না থাকে তাহলে তাদের আমরা মোবাইল কোর্টের মাধমে জেল-জরিমানা করে থাকি। আমরা চাই ভেজালমুক্ত ওষুধের বাজার তৈরি করতে। কারণ, এটি মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে জড়িত।
ওষুধ বিক্রেতারা জানান, বেশি লাভের কারণে তারা ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে। এসবের কারণে তারা ধরা পড়লে তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা ওষুধ কোম্পানিগুলোই করে থাকে। একই সঙ্গে তাদের যা জরিমানা করা হয় তা সব দিয়ে দেয় ওষুধ কোম্পানিগুলো। তারা আরো জানান, অনেক বড় কোম্পানিও ভেজাল ওষুধ বানিয়ে থাকে। সবাইকে এসব ওষুধ দেয়া হয় না। যারা ওষুধ সম্পর্কে বুঝে না তাদের দেয়া হয়। আর বেশির ভাগ লোক প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ নেয়। তাদের এসব ওষুধ দেয়া সহজ হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে ১৫ শতাংশ ওষুধই ভেজাল। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ ভেজাল ওষুধ তৈরি হয় ভারতে। এরপর নাইজেরিয়ায় ২৩ শতাংশ। এ দেশটির মোট ওষুধের মধ্যে ৪১ ভাগই ভেজাল ওষুধ। এরপরে রয়েছে পাকিস্তান যার শতকরা ১৫ শতাংশ ওষুধই ভেজাল। তবে বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। দেশের একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে শতকরা ১০ ভাগ ভেজাল ওষুধ বিক্রি হয়। যার মূল্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস্ পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. নাহিতুন নাহার ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্য সেবা পেতে গিয়ে রোগীরা শুধু ওষুধের পেছনেই ৬৫ শতাংশ অর্থ খরচ করে। গরীব রোগীরা আরও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ভেজাল ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, কোম্পানীগুলো অনৈতিক প্রতিয়োগীতা করে নি¤œমানের ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে। যে কারণে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
দেশে দুটি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি রয়েছে। একটি রাজধানীর মহাখালীতে আর একটি চট্টগ্রামে। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জব্দ করা ওষুধগুলোর বেশির ভাগই টেস্টের আগেই বদলে ফেলা হয়। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এখানকার কিছু কর্মকর্তার যোগসূত্র রয়েছে বলে তিনি জানান। ওষুধ টেস্টিং ল্যাবরেটরি দেয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৭ হাজার ১টি। এর মধ্যে মানোর্ত্তীণ নমুনার সংখ্যা ৬ হাজার ৬১২টি ও মান-বহির্ভূত নমুনার সংখ্যা ২৫৬।
ওষুধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানার সংখ্যা ২৮১টি, ইউনানির সংখ্যা ২৬৬টি আয়ুর্বেদিক ২০৭টি হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হারবাল ৩২টি। এসব কারখানায় মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বলেই চলে। এছাড়া ওষুধ কোম্পানি ও ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ওষুধ আদালতে ৯টি, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০টি, মোবাইল কোর্টে ৬৩৭টি মামলা করা হয়েছে। টাকা জরিমানা করা হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
ভেজাল ওষুধের অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায়, ছোট-খাটো অনেক বৈধ কোম্পানিও ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের ওষুধ ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। একই সঙ্গে ওষুধের মেয়াদ টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে তা বিক্রি করছে ফার্মেসিগুলো।
বাংলাদেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের এলাকা। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়াও হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। এরপরও এখানে কোনো ওষুধ টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা নেই।
মিটফোর্ডের কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, বেশির ভাগ ওষুধ কোম্পানিই এখান থেকে ওষুধের কাঁচামাল কিনে নিয়ে যায়। যে ওষুধগুলোর দাম বেশি ও সহজে পাওয়া যায় না সেসব ওষুধগুলো ভেজাল করে থাকে তারা। ভেজাল কীভাবে করা হয় তা জানতে চাইলে তারা জানান, আসল ওষুধের কাঁচামালের সঙ্গে তারা খাবার সোডা, আটা, ময়দা, সুজি ও চিনি মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করে। এটি পরীক্ষা ছাড়া ধরা সম্ভব নয়। তারা জানান, এন্টাসিড এবং ওমিপ্রাজলে যে সব উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকার কথা প্যাকেটে তা ঠিকই থাকছে। কিন্তু ওষুধে জায়গা পাচ্ছে না তার কিছুই। প্যাকেট দেখে এসব ওষুধের ভেজাল ধরা পড়াতো দুরের কথা সন্দেহ করাও সুযোগ নেই। এ ছাড়া কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির মাধ্যমে সারা দেশের ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমেই রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওষুধের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে ভেজাল ওষুধ।
এছাড়া চিকিৎসকরাও মোটা অংকের কমিশনের লোভে প্রায়ই অনুমোদনবিহীন ওষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। রোগীর স্বজনরা ওই ওষুধ সংগ্রহে ফার্মেসিতে যান। এসব ওষুধের চাহিদা থাকায় দোকানিরাও বাড়তি মুনাফার লোভে বিক্রি করছেন। ফলে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে মানহীন ও অনিরাপদ ওষুধ ব্যবহার করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে দেশের বিমান, নৌ ও স্থল বন্দর নিয়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন, নকল-ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে দেশের সবগুলো বন্দরে অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু নকল ভেজাল-ভেজাল ও অনুমোদনবিহীন ওষুধই নয়-অনুমোদিত ওষুধও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দেখভাল করার সুযোগ হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের সবগুলো বন্দরে তাদের অফিস স্থাপন করা জরুরী। এ লক্ষে নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি এবং অফিস স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্রে আরো জানা গেছে, নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে অফিস স্থাপনেরও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস অব হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের বর্তমান সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ ই-মাহাবুব বলেন, দেশে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বাড়াতে হবে মনিটরিং কার্যক্রম। পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের জনবল ও কার্যদক্ষতাও বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সম্পর্কে বলেন, এই ওষুধ শরীরের যে রোগের জন্য খাওয়া হচ্ছে, তার কাজ হচ্ছে না। এতে টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একই সঙ্গে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ও অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আসিফ ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১:৪৯ পিএম says : 0
দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন