ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা
জীবন রক্ষায় ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ সুযোগকে শতভাগ কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির ওষুধ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট। ছাগলনাইয়া উপজেলার কিছু ফার্মেসিতে এখন ভুয়া কোম্পানির ভেজাল ওষুধে সয়লাভ। ওষুধগুলো কোথায় তৈরি হয়, কোথা থেকে সরবরাহ হয়, তা কারোরই জানা নেই। সরবরাহকৃত ওষুধগুলোর প্যাকেটে লেখা নেই সঠিক কোন ঠিকানা ও তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহের নাম। নামিদামি কোম্পানির হুবহু প্যাকেটের সাথে প্রায় মিল রেখে বাজারজাত করা হচ্ছে এসব প্রাণঘাতী ভেজাল ওষুধ। ছাগলনাইয়ার কলেজ রোডের রুমা ফার্মেসি, ভাই ভাই মেডিকেল হল, মেইন রোডের বাংলাদেশ মেডিকেল হল, ভূঁঞা মেডিকেল হল, মিয়াজী মেডিকেল হল, রয়েল ফার্মেসি, ও হাসপাতাল রোডের তিশা মেডিকেল হলসহ কতিপয় অসাধু ফার্মেসির মালিক ও ভুয়া কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে ওষুধগুলো প্যাকেটজাত করে জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ভিটামিন এবং যৌন উত্তেজক ওষুধ দোকানে দোকানে ফর্মে থাকা ইঞ্জেকশান ট্যাবলেট ও সিরাপ জাতীয় ওষুধগুলো সরবরাহ করে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে স্বঘোষিত হাতুড়ে ও অসাধু ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্রেও থাকে এসব ওষুধের নাম। কারণ নামিদামি ব্রান্ডের কোম্পানিগুলোর মতই দেখতে একই হলেও ওষুধগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল। এ ভেজাল ওষুধের তালিকায় রয়েছে প্রাণঘাতী এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিরাপ। এসব ওষুধ নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজী নন ফার্মেসির মালিক এবং ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। অপরদিকে ওষুধ প্রশাসনের নীরবতার সযোগে বিভিন্ন স্থানের মতো ছাগলনাইয়া উপজেলায় অনেক অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী এখন জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন বলে দাবি এলাকার সাধারণ মানুষের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাগলনাইয়ার মেইন রোর্ডের ফার্মেসির এক মালিক জানান, প্রতারক কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা চিকিৎসককে মাসিক চুক্তিতে উৎকোচ দিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ভুয়া কোম্পানির নাম সর্বস্ব ভেজাল ওষুধগুলো লিখিয়ে নেন। এছাড়া ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ কিনতে রোগীদের মগজ ধোলাই করে ফার্মেসিগুলোর নিয়োজিত চাটুকার ওষুধ বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল রোডের অপর এক ফার্মেসির মালিক জানান, ভুয়া কোম্পানির ওষুধগুলো গোপনে সরবরাহ হলেও রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ওইসব ওষুধের নাম লেখা থাকে। এ জন্যই তারা ভেজাল না আসল কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। তবে ওই ওষুধ বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় এবং ব্যবস্থাপত্র ফেরৎ যাওয়ার আশঙ্কায় তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ওষুধগুলো দোকানে রাখেন। তিনি আরো জানান, ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হাতে বিক্রি হয় যৌন উত্তেজক ট্যালেট ও বিভিন্ন আইটেমের সিরাপ। ওষুধ বিশেষজ্ঞ কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (জিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ না করে ওষুধ উৎপাদিত করা হলে সেই ওষুধ মানসম্পন্ন হয় না, এ ওষুধ ব্যবহার কারীর অসুখ না সেরে বরং শরীরের মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রাণহানীরও সম্ভাবনা থাকে। সচেতন মহলের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের ওষুধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় প্রতারক সেন্ডিকেট (চক্র) এ সুবিধা নিচ্ছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুয়া ও নি¤œমানের ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ফার্মেসির দালালরা হাসপাতালের ইমারজেন্সি কক্ষে ঢুকে অনেক সময় রোগীদের হাত থেকে জোরপূর্বক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে প্রতারণা করে নি¤œমানের ওষুধ ঢুকিয়ে দেয়। ফেনীর সিভিল সার্জন অফিসের তেমন কোন তদারকি নেই বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ছাগলনাইয়া উপজেলা ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি সুধাংশু বিকাশ শর্মা ও সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আফছান কয়েকটি ফার্মেসিতে ভেজাল ও নিন্ম মানের ওষুধ বিক্রয়ের সত্যতা স্বীকার করে জানান, অসাধু ব্যবসায়ীদের সমিতির পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সমিতি সবসময় সোচ্ছার। নকল ও ভেজাল ওষুধ বিপণন সংরক্ষণ যারা করবে তাদেরকে প্রথমে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হবে। তারপরও তারা সমিতির সিদ্ধান্ত না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর বলেন, জীবন রক্ষায় ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সেই ওষুধ নিয়ে কেউ যদি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন