শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে ইউরোপীয় আদালতের দ্বারে তরুণী

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৪ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা যে তরুণ প্রজন্মের বাকি জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলছে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই৷ সেই বিপর্যয় এড়াতে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে পর্তুগালের এক পরিবার ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে৷

ক্লাউডিয়া দুয়ার্তে আগুস্তিনিও গাছপালার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে পড়ছেন৷ পর্তুগালের অ্যাটলান্টিক উপকূলে সবুজের সমারোহের কথা তিনি মনে করতে পারেন৷ কিন্তু দাবানলের পর থেকে পাইনের গাছ লাল হয়ে গেছে৷ ক্লাউডিয়া বলেন, ‘‘এমন সুন্দর জায়গায় ধ্বংসলীলা দেখলে মনে ভারি দুঃখ হয়৷ এমন ঘটনা আরও ঘনঘন দেখা যাবে, এই জায়গাটি যেন সেই আশঙ্কার প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ শুধু এখানে নয়, আমাদের গ্রহের সর্বত্র৷ এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত৷''

পর্তুগালে বারবার দাবানল সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে৷ ২০১৭ সালে সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে৷ সেই ঘটনায় ১১০ জন নিহত, অসংখ্য মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে৷ আবহাওয়া আরও শুষ্ক ও গরম হয়ে ওঠায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়৷

ক্লাউডিয়ার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে৷ সে কারণে ২১ বছর বয়সি নার্সিং ছাত্র হিসেবে তিনি প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান৷ রাজধানী লিসবন থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে লেইরিয়া শহরের বাসিন্দা তিনি৷ তবে রাজপথে অনেক বিক্ষোভ দেখিয়ে কোনো লাভ হয়নি৷ সে কারণে তিনি এবার ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনো এক দিন বিপদহীন ও সুস্থ এক পৃথিবীতে বাস করতে চাই বলে ৩৩টি দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছি৷''

ক্লাউডিয়ার ভাই-বোন ও তিন বন্ধুও সেই মামলায় শামিল হয়েছেন৷ ১৮ বছর বয়সি ভাই মার্টিম হাঁপানি রোগে ভুগছেন৷ তাঁদের মতে, আরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ বেড়ে চলা উত্তাপ ও দাবানলও এমন অবস্থার কারণ বলে তাঁরা মনে করেন৷ মার্টিম মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্বাসজনিত সমস্যা বাড়বে৷ তাঁর মতো মানুষের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে৷

তাঁদের বাবা-মাও এই মামলার প্রতি সমর্থন করছেন৷ টেরেসা মোটার বয়স ৪৭৷ তিনি জার্মানিতে বড় হয়েছেন৷ তাঁর মতে, তাঁর নিজের জীবনে দুশ্চিন্তা না থাকলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের ভয়ভীতি তিনি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন৷ সে কারণে স্ট্রাসবুর্গ শহরের আদালতের বিচারকরা এই মামলাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট৷ টেরেসা বলেন, ‘‘আমার ছোট সন্তান আছে, যার বয়স মাত্র নয়৷ তার জীবন কেমন হবে? আমারও মনে কিছুটা অপরাধবোধ জেগে ওঠে৷ আমি কিছুই করতে পারিনি, কোনো অবদান রাখি নি৷ বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবনাচিন্তা করি নি, আমার সন্তানদের মতো সেই অধিকারের জন্য লড়াই করিনি৷ তাই মনে অপরাধবোধ জন্মায় বৈকি৷''

ক্লাউডিয়া আগের প্রজন্মকে দোষ দেন না৷ তাঁরা তো আর বেশি ভালো জানতেন না৷ কিন্তু যারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেই অস্বীকার করে, তাদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ কম নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, যে সব মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাস করে না, তাদের মনে বিশেষ অপরাধবোধ কাজ করে৷ তারা একেবারেই বিশ্বাস করতে চায় না৷ আমরা নিজেদের গ্রহের কী দশা করছি, তা স্বীকার করতে তাদের আসলে বড্ড কষ্ট হয়৷''

‘গ্লোবাল লিগাল অ্যাকশন' নামের আয়ারল্যান্ডের মানবাধিকার সংগঠন এমন মামলার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে৷ আইনজীবী হিসেবে গেরি লিস্টন ও তাঁর টিমের কৌশল কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল৷ কারণ, ইউরোপীয় আদালত এমন মামলা জাতীয় আদালতে পাঠিয়ে দিতে পারতো৷ কিন্তু বিচারপতিরা তরুণ পর্তুগিজদের মামলাটি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেন৷ গেরি মনে করেন, ‘‘এমন বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে কোনো সরকার নির্দেশিকা মেনে কার্বন নির্গমন না কমালে তারা আসলে জনসংখ্যার একটি অংশের প্রতি বৈষম্য করছে৷ নির্দিষ্ট বয়সের মানুষ, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ও ভিটেমাটি ঝুঁকির মুখে ফেলছে৷''

এমন সব ছবির মাধ্যমে গেরি লিস্টনের বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে যায়৷ তিনি ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ ও প্যারিস জলবায়ু সংরক্ষণ চুক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তাঁর মতে, চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সর্বোচ্চ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ আরও কমাতে হবে৷

এই সংগ্রামে সাফল্য সম্পর্কে ক্লাউডিয়া আশাবাদী৷ কারণ তাঁর মামলাও সরকারগুলির উপর চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে৷ ক্লাউডিয়া মনে করেন, ‘‘আমরা যা করছি, তার জন্য অনেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে৷ ফলে আমার অত্যন্ত আনন্দ হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ চলা বাকি৷ তার জন্য আমাদের অনেক শক্তির প্রয়োজন৷ শেষ পর্যন্ত আমরা তো কিছু হাসিল করতে চাই৷'' কবে মামলার রায় হবে, তা বলা যাচ্ছে না৷ কারণ ৩৩টি দেশই ক্লাউডিয়া ও অন্যান্যদের এই মামলাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে মানতে প্রস্তুত নয়৷ সূত্র: এনপিআর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন