শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বাকৃবি ও বিনার উদ্ভাবন: দেশে প্রথমবারের মত ধানের জীবনরহস্য উন্মোচন

শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৩৭ পিএম

দেশে প্রথমবারের মত ধানের পূর্ণাঙ্গ জীনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য ও বিভিন্ন জিন আবিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল গবেষক লবণাক্ততা ও বন্যা সহিষ্ণু বিনা ধান ২৩-এর উপর গবেষণা করে এ সাফল্য পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সভাকক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এসময় ধানের জীবনরহস্যের উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে বাকৃবির গবেষক পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, বিনার প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী মানস কান্তি শাহা গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সম্মেলনে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, সাধারণত বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলোতে বিভিন্ন রেডিয়েশন প্রয়োগের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা হয়। তবে এই রেডিয়েশনের প্রভাবে জিনের কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা আগে জানা সম্ভব হতো না। আমাদের এই উদ্ভাবনের ফলে এখন থেকে যেকোনো ধানের জাতের জিন পর্যায়ে কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।

গবেষণা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান-২৩ একটি লবণাক্ত ও বন্যা সহিষ্ণু ধানের জাত। ২০১৯ সালে বাকৃবি ও বিনার গবেষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় বিনাধান-২৩ ও তা থেকে উৎপন্ন তিনটি মিউটেন্ট (রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত জাত) ধানের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয় যা বাংলাদেশে প্রথম। এই জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের ফলে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ধানের জাতে আমরা প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু ২৩টি জিন, উচ্চ ফলনশীল বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ১৬টি জিন এবং চালের আকার-আকৃতির জন্য দায়ী ৪টি জিন শনাক্ত করতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, এই গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে ধানের জাতের শনাক্তকৃত জিনগুলো পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা রেফারেন্স জিনোম হিসেবে ব্যবহার এবং ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতে স্থানান্তর করতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর অতিরিক্ত এই মানুষগুলোর খাদ্য চাহিদা মেটানো কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত ফসলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমেই কেবল সবার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, বিনা ও বাকৃবির সমন্বয়ে উদ্ভাবিত ধানের এই জিনোম সিকোয়েন্সের ফলে লবণাক্ত ও হাওড় এলাকায় ধানের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়াও দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টিসম্মত খাদ্য উৎপাদনে অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে। গবেষণাটিকে যাতে দ্রুত মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন