বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

মানবদেহের অণুজীব নিয়ে দেশে গবেষণা নেই

সব ধরণের সহায়তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি বিজ্ঞানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৪৮ পিএম

শরীরে থাকা বেশিরভাগ মাইক্রোবায়োমই উপকারি, যা মানুষের সুস্থ্য থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, শিল্পায়নের ফলে মানুষের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে নেতিবাচক পরিবর্তন, ফাস্টফুট-জাঙ্কফুড প্রবণতা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন মাইক্রোবায়োমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ফলে শরীরের পরিপাকক্রিয়া বিনষ্ট হওয়াসহ নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি দেশে এ নিয়ে কোন ধরণের গেবষণাই নেই। আর তাই মানবদেহে থাকা বিভিন্ন ধরণের অণুজীব বা মাইক্রোবায়োম নিয়ে দেশে গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন মাইক্রোবায়োমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে বাড়ছে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)-এ মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে স্বাস্থ্য এবং সক্রামক ব্যাধির সম্পর্ক নিয়ে এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা গবেষণায় গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণায় সব ধরণের সহায়তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন।

সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ইজিবায়োম ইনক. (যুক্তরাষ্ট্র)-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. নূর এ হাসান। তিনি জানান, মানবদেহে বসবাস রয়েছে বিভিন্ন ধরণের অণুজীব বা মাইক্রোবায়োমের। এর প্রায় ৯৫ ভাগের বসবাস অন্ত্রে বা পাকস্থলীতে।

নূর এ হাসান বলেন, শরীরে থাকা বেশিরভাগ মাইক্রোবায়োমই উপকারি, যা মানুষের সুস্থ্য থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, শিল্পায়নের ফলে মানুষের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে নেতিবাচক পরিবর্তন, ফাস্টফুট-জাঙ্কফুড প্রবণতা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন মাইক্রোবায়োমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ফলে শরীরের পরিপাকক্রিয়া বিনষ্ট হওয়াসহ নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

মানুষের শরীরের উপকারি মাইক্রোবায়োমকে সতেজ রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অধিক হারে শাক-সবজি গ্রহণ, খেলাধুলা, প্রকৃতি ও মাটির সংস্পর্শে থাকার তাগিদ দেন এই বিশেষজ্ঞ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. ফজলে আলম রাব্বি জানান, মাইক্রোবায়োম নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন গবেষণা হয়নি। ফলে মাইক্রোবায়োম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কেও কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। অথচ মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা করে যথাযথ খাদ্যাভ্যাস এবং বসবাসের পরিবেশ গড়ে তোলা গেলে, রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।

সেমিনারে জানানো হয়, দেশে মাইক্রোবায়োম নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা করতে কাজ করছে দেশ-বিদেশের সরকারি-বেসরকারি তিন প্রতিষ্ঠানÑ বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস, ইজিবায়োম ইনক. (যুক্তরাষ্ট্র) এবং বাংলাদেশের প্রথম মলিকিউলার ডায়গনষ্টিক ল্যাব ডিএনএ সল্যুশন লিমিটেড।

করোনাকালীন সময়ে এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে দেশে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের ১৫১টি জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ইউরোপ থেকে আসা। এবার দেশে মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চায় প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ প্রসঙ্গে বিআরআইসিএম’র মহাপরিচালক ড. মালা খান বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা ইজিবায়োম এবং ডিএনএ সল্যুশনের সঙ্গে মিলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করতে চাই। অতীতে আমাদের বিভিন্ন কাজে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা পেয়েছি, এক্ষেত্রেও আমরা তা পাবো বলে আশা করছি।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে বিআরআইসিএম, ইজিবায়োম এবং ডিএনএ সল্যুশনের গবেষণার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আফতাব আলী শেখ।

স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা আরও আগে শুরু করা দরকার ছিল। এখন আপনারা শুরু করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের দুটি জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাব আছে আন্তর্জাতিক মানের। এই ল্যাবগুলো যদি আপনাদের (গবেষকদের) কোন কাজে দরকার হয়, যেকোন সময় আপনারা এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনএ সল্যুশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাবেদ ইকবাল পাঠান এবং বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) পরিচালক প্রফেসর ডা. রুহুল আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন