বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উপক‚লীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। শুস্ক মৌসুমে যখন বেড়িবাঁধ মেরামত করার সুযোগ থাকে তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মেরামত করে না। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অনেক স্থানেই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কোথাও কোথাও ঠিকাদাররা দায়সারাভাবে বাঁধের মেরামত কাজ শেষ করে। ফলে দুর্যোগে সহজেই ঐসব বাঁধ ভেঙ্গে যায়। দেশের খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় মোট ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ২৪০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এই বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। কিন্তু এখন এই ২৪০ কিলোমটিার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। অর্থাভাবে দীর্ঘদিনেরও প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ষাটের দশকে তৈরি ঐ বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বাঁধগুলো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস এবং নিম্নচাপ, লঘুচাপ, অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা ঠেকাতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। তাছাড়া নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারেও বাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে উপক‚লীয় খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাট সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এবং বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলার কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের উপক‚লীয় তিন জেলার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম এবং সেগুলোর মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাছাড়া ঐ বাঁধ দীর্ঘদিনেও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লবণাক্ত মাটি দিয়ে উপক‚লীয় বেড়িবাঁধ গুলো তৈরি। উপক‚লীয় এলাকার অধিকাংশ নদীর পানিও লবণাক্ত। লবণাক্ত পানি বেড়িবাঁধের মাটির বডিং দুর্বল করে ফেলে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের মাটি ধুয়ে যায়।
তাছাড়া বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার কারণেও বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। তাছাড়া উপক‚লীয় নদীগুলোতে পলি পড়ে নাব্য কমে গেছে। ফলে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে। তাছাড়া প্রতি বছর গড়ে প্রায় দু’বার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস আঘাত হানছে। তখন জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে যে বেড়িবাঁধ রয়েছে তা দিয়ে উপক‚লীয় জনপদ রক্ষা করা সম্ভব নয়। সেজন্য নতুন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাউবো খুলনার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. সফি উদ্দিন জানান, উপক‚লের অনেক স্থানেই বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এস,এম, শফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, পাউবোর বরাদ্দকৃত অর্থ নির্দিষ্ট স্থানে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ইতোমধ্যে ১৪/১ ও ১৩-১৪/২১ নং পোল্ডার মেরামতসহ দুটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। সেগুলোর নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। দুই-এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহŸান করা হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার ও পুনর্বাসনের কাজ আগে করা হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার ও পুর্নবাসনের কাজ আগে করা হবে। তাছাড়া ২০, ২১, ২২ ও ৩১ নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্প প্রণয়ন হলে অনুমোদনের জন্য পাটানো হবে। বর্তমানে কয়রা যে কাজ চলছে তা অত্যন্ত ধীর গতিতে। আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই বেড়িবাঁধ গুলোর মাটির কাজ সম্পন্ন করা না হলে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার আবারও নোনাপানিতে ভেসে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন