শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

 

মানুষরূপী একশ্রেণীর নরপশুর নৃশংসতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, দিনাজপুরে পাঁচ বছরে একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শিশুটির অবস্থা দেখে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম বলেছেন, আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ভিকটিম দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু এই শিশুটিকে দেখার পর থেকে স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। চিকিৎসক হয়েও নিজেকে সামলাতে পারছি না। অন্য খবরে বলা হয়েছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের কুতুবদিয়া গ্রামে কথিত প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বখাটে আরাফাত রহমান সোমবার গভীররাতে ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মুন্নি আখতারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বখাটেদের ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছে আরেক স্কুলছাত্রী পুজা। এক্ষেত্রেও প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় লিপু নামের এক বখাটে ছুরিকাঘাত করে মেয়েটিকে। মেয়েটি এখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গত কয়েক মাসে একটির পর একটি নৃশংস ও বর্বর ঘটনা ঘটে চলেছে। ক’দিন আগে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে হত্যা করে বখাটে ওবায়দুল। এর পরপরই ঘটে সিলেটে খাদিজা আক্তারের ঘটনা। এই মেয়েটি এখনো হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। মাদারীপুরে কালকিনি উপজেলায় স্কুলছাত্রী মিতু ম-ল বখাটের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৮০১, ১০১৪, ৬৪৫, ৪৭০, ৪৪৪ জন এবং ৩২৮ জন নারী ও শিশু উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছে। এদের অনেকে আহত ও নিহত হয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে প্রতিদিন উন্নয়নের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে বোধকরি দেশে নারী ও শিশুর ওপর নির্মমতা তা মøান করে দিচ্ছে। কিছুতেই যেন এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। মাত্র ক’দিন আগেই সিলেটে একটি শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে খুন হওয়া তনু হত্যাকা-ের এখনও কোন কূল-কিনারা করা যায়নি। গতকাল প্রকাশিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি পাঁচবছরের শিশুকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের যে বীভৎস চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা অকল্পনীয়। একটি শিশুকে এধরনের শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে তা কল্পনাও করা যায় না। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? আমরা কি কোন সভ্য দেশের নাগরিক? এ কোন সমাজে আমরা বসবাস করছি? একে কেবলমাত্র মূল্যবোধের অবক্ষয় বলেই শেষ করা যাবে না। বিশ্লেষকরা এ জন্য আইনের শাসন ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, অনেকক্ষেত্রেই অপরাধীকে আইনের মুখোমুখি করা হয় না। এডভোকেট সালমা আলী মনে করেন, বিচারহীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এডভোকেট এলিনা খান মনে করেন, যখন দেশে আইন ও বিচারব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, রাজনৈতিক সমস্যা বিরাজ করে, তখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকে না। অপরাধীরা মনে করে দুর্বল নারীরা কিছু করতে পারবে না। সমাজ-রাষ্ট্রে আইন যে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সে চিত্রই উঠে এসেছে আলোচ্য ঘটনাবলীতে। শিক্ষামন্ত্রীও ছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বেশিরভাগ ঘটনার পিছনে সরকার সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী কোন না কোন মহলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এযাবৎ ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মধ্যে দু’একটা ঘটনা ব্যাপক প্রচারণা পেলেও আরও অনেক ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এটা কোনো সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। গত কিছু দিনের ঘটনাবলী প্রমাণ করছে, বখাটেরা ক্ষমতার দিক থেকে এতটাই শক্তিশালী যে ভিক্টিমের পরিবার অভিযোগ করার সাহসও পায় না। চিড়িয়াখানা এলাকায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা প্রমাণ করে সামাজিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সমাজে মূল্যবোধের অভাব, শিক্ষার অভাব এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা পরিস্থিতিকে গুরুতর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ভবন, ব্রিজ, অবকাঠামো নির্মাণের মত উন্নয়নকে যত বড় করে দেখা হোক না কেন, সমাজ যে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় বিপজ্জনক রূপ লাভ করছে, তা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য সব ঘটনা সাক্ষ্য দিচ্ছে। এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা যেই হোক তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিক তৎপর ও নির্মোহভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়ে তোলাও অপরিহার্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন