রেজাউল করিম রাজু : শিক্ষা নগরী রাজশাহী এখন সরগরম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা। আর ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে এসেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সাথে তাদের অভিভাবকরা। কোনো কোনো মেয়ের সাথে পিতা-মাতা দু’জনেই এসেছেন। কারো কারো সঙ্গী হয়েছে ভাইবোনও। পরীক্ষার্থীর সঙ্গ দেবার পাশাপাশি এ নগরী দেখার সাধ মিটছে। সব মিলিয়ে রাজশাহী এখন উৎসবমুখর নগরী। বাসে-ট্রেনে চেপে আসছে মানুষের ¯্রােত। সর্বত্র ঠাঁই নেই অবস্থা। রাস্তাঘাটেও প্রচুর মানুষের আনাগোনা। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ি, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস সর্বত্র সরগরম। সব ধরনের হোটেলের সিট মাসখানেক আগেই বুক হয়ে গেছে। ফিরতি টিকিটও সঙ্কট। শিক্ষানগরীর কারণে নগরীর বাইরে থেকে এখানে পড়ালেখা করতে আসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে এসে যোগ হয়েছে আরো প্রায় লাখখানেক। ফলে সর্বত্র চাপ বেড়েছে। নগরীর আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা ছাত্রাবাস আর ছাত্রীনিবাসগুলোর মেঝেতে এখন জায়গা নেই। যাদের কেউ নেই কিংবা হোটেলে স্থান পায়নি এমন অনেকের ঠাঁই হলো রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম। এমন নেই অবস্থার মধ্যে সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ খুঁজছে। ছাত্রাবাস-ছাত্রীনিবাসগুলো এবার অতিথিদের জন্য একশ’ দুইশ’ টাকা করে নিচ্ছে। খাবার দামও বাড়িয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় জমজমাট ব্যবসা। খাবার সরবরাহ করে শেষ করতে পারছে না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোটেলগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে ঠাঁই নেই অবস্থা বিরাজ করছে। খাবার ক্যান্টিনগুলোতে বেজায় ভিড়। হলগুলো যেন সারারাত জেগে থাকছে। শেষ বারের মতো বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নেয়ার পাশাপাশি গল্পগুজবও কম নয়। সকাল থেকে ক্যাম্পাস হচ্ছে লোকে লোকারণ্য। এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে পৌনে দু’লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এর সাথে রয়েছে অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব। আবার একই সময়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা। সেখানে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। দুই বিশ্ববিদ্যালয় পাশাপাশি হওয়ায় তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর এলাকায় জন আর যানজট প্রকট হয়েছে। পরীক্ষার সময় এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দায় হয়েছে। পরীক্ষার্থীদেরও অনেক দূর নেমে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। পোয়াবারো অটোরিকশা আর রিকশার। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীর চেয়ে এসব যানবাহন একেবারে অপ্রতুল। তাছাড়া সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ফলে কারো ফুরসত নেই। পরীক্ষার্থীদের হলে পাঠিয়ে সাথের অভিভাবকরা ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে জটলা করছেন। আবার কেউ কেউ ক্যাম্পাসের মতিহার সবুজ চত্বর ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ অনেকেই। চট্টগ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে এসেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিউল আলম। সঙ্গে এসেছেন সহধর্মিণীও। মেয়ের পরীক্ষার সুবাদে জীবনে প্রথমবারের মতো এসেছেন দেশের এক প্রান্ত বন্দরনগরী হতে আরেক প্রান্তের উত্তর জনপদের আম আর রেশম নগরীর ঐতিহ্য ধারণকারী রাজশাহীতে। অনেকটা রথ দেখা কলা বেচার মতো। মেয়েদের নিয়ে এসেছেন যশোরের বিশিষ্ট সাংবাদিক হাবিবুর রহমান নান্টুর স্ত্রী। এমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ। বিকেলে পদ্মা তীরে ছিল প্রচ- ভিড়। ক’দিন আগে মরা পদ্মা ফুঁসে উঠলেও এখন ধার অনেকটা কমেছে। তারপর পদ্মার বিশালত্ব দেখে বলছেন এই তো কবি-সাহিত্যিকদের স্বপ্নময় পদ্মা। অনেকেই নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর সেলফি তোলার কথা নাইবা লিখলাম। রেশম নগরী রাজশাহীতে এসেছি সিল্কের দোকানে ঢুঁ মারব না তা কি হয়। ফিরে যাবার আগ দিয়ে সেখানেও যাচ্ছেন। কেনাকাটাও মন্দ নয়। সিল্কের বিশাল বিশাল শোরুমে থরে থরে সাজানো নজরকাড়া ডিজাইনের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, শার্ট, টাইসহ নানা পোশাক। স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য সেখানেও চলছে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা। সপুরা সিল্ক ফ্যাক্টরিতে প্রবেশমুখে রয়েছে রেশম তৈরির প্রদর্শনী। চোখের সামনে কাপড় তৈরির দৃশ্য। সবচেয়ে সুখের বিষয় হলো পথের ক্লান্তি ছোটখাটো কিছু ভোগান্তি সয়েও কারো তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে রয়েছে ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরামর্শ। আর পরিচ্ছন্ন সবুজ শিক্ষানগরী রাজশাহী ঘুরে এখানকার মানুষের আতিথেয়তা আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থা দেখে প্রশংসা ছিল মুখে মুখে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন