ফটিকছড়িতে মদ ব্যাপারী ধরতে গিয়ে চা শ্রমিকদের পাগলা ঘন্টার কবলে পড়ে অবরুদ্ধ হয়ে যায় র্যাব। এ সময় র্যাব-শ্রমিক সংঘর্ষে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ ও পাঁচ র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে র্যাবের ৪টি অস্ত্র খোয়া যায়। ২৭ ডিসেম্বর (সোমবার) বিকেল ৫টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ১১টা পর্যন্ত টানা ১৮ ঘন্টার অভিযানে খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব-পুলিশ। ফটিকছড়ির ভূজপুর থানাধীন সুয়াবিল ইউপির বারমাসিয়া চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ৫টা নাগাদ র্যাব-৭ হেডকোয়ার্টারের একটি দল সাদা পোষাকে টিকে গ্ৰুপের মালিকানাধীন ফটিকছড়ির বারমাসিয়া চা বাগানে দু'টি গাড়ী যোগে প্রবেশ করে এবং চা শ্রমিক ও বাংলা মদের কারবারী চিত্তরঞ্জন (৪৬) কে আটক করে। এ সময় চা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিপ্লব দে নামে এক চা শ্রমিককেও সন্দেহ বশতঃ হ্যান্ডকাপ পড়ায় র্যাব। এতে র্যাব-চা শ্রমিক তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং শ্রমিকরা র্যাবের একটি কার ভাংচুর করে। র্যাব পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে কারটি নিয়ে কোন মতে গেইটের বাইরে চলে যায় এবং অন্যান্য সদস্যদের উদ্ধারে গুলি ছুঁড়লে মনতোষ (৫৫) নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে দৌড়ে বাগানে ঢুকে পড়ে। তার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে উত্তেজিত শ্রমিকরা ডাকাত এসেছে বলে পাগলা ঘন্টা (বাগানের অভ্যন্তরে কোন দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে সংকেত হিসেবে এ ঘন্টা বাঁজানো হয়) বাজিয়ে দেয়। এ সময় বাগানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক জড়ো হয়ে র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করে তাদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে র্যাব সদস্যদের মারধর করে উশৃঙ্খল শ্রমিকরা এবং কেড়ে নেয় তাদের অস্ত্রও। এতে ৫ র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হয়। আহতরা হলেন, র্যাবের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ (৩০), ডিএডি আবদুস সালাম (৪২), এসআই শাহিন আলম (৩০), সদস্য মোহাম্মদ মহিতুর রহমান (৩২), মমিনুল হোসেন (২৯) এবং গুলিবিদ্ধ চা শ্রমিক মনতোষ দে (৪৬)। আহত র্যাব সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে নাজিরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে চট্টগ্রাম সিএমএইচে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় বাগানের শ্রমিকরা র্যাবের ব্যবহৃত একটি হাইচ (ঢাকা মেট্রো-চ-২৫-৬৭১১) ও ১টি প্রাইভেট কার (চট্টমেট্টো-গ-৪৫-২০২৯) ভাংচুর করে। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান ভূজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দীন ফারুকী এবং শ্রমিকদের শান্ত করে অবরুদ্ধ র্যাব সদস্যদের ঘেরাও মুক্ত করেন।
পরে র্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মশিউর রহমান, উপ-পরিচালক মেজর মেহেদী হাসান, হাটহাজারী সার্কেল পুলিশের এডি: এসপি শাহাদাত হোসেন, ভূজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দীন ফারুকীর নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ র্যাব ও পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। খোয়া যাওয়া ৪টি অস্ত্রের মধ্যে সোমবার রাতে ৩টি উদ্ধার হলেও ১টি না পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চলমান থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ সেটি পাওয়া গেলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় চা বাগান ম্যানেজার জসিম উদ্দিন চৌধুরীসহ ৭ জন আটক আছে বলে গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভূজপুর থানায় কোন মামলা হয়নি বলে ওসি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন