সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

নারীর অবদান ও অংশীদারত্বের স্বীকৃতি এখনো আসেনি: ডা. ফওজিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:০০ পিএম

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর অবদান এবং অংশীদারত্ব থাকলেও এর স্বীকৃতি এখনো আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সবার জন্য সমতাপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ১৩তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ‘পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর সমঅংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে’ স্লোগান সামনে রেখে সম্মেলন শুরু হয়।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করে প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে হলে উন্নয়নের মূলধারায় নারীকে যুক্ত করতে হবে, রাষ্ট্রীয় নীতি নারীবান্ধব হতে হবে, বাস্তবায়নকারীদের জেন্ডার সংবেদনশীল হতে হবে, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকার দিতে হবে, সিডও সনদের ধারা-২ এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে মহিলা পরিষদের এ সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

৫০ বছর ধরে নারীর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন তথা সমাজ-রাষ্ট্রে সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠনের ধারাবাহিকভাবে কাজ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে নারীর প্রতি তৈরি হওয়া নানামুখী সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি মহিলা পরিষদকেও সাংগঠনিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এসময় স্পিকারের শুভেচ্ছা বাণী উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু তার বক্তব্যে বলেন, সম্মেলনে ৫৫টি জেলা থেকে মোট ৪৮০ জন্য কাউন্সিলর উপস্থিত আছেন। সংগঠনের ৫১ বছরের পথচলায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান। তবে এর পেছনে রয়েছে রূঢ় বাস্তবতা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর কাজের স্বীকৃতি ও অংশীদারত্ব নিশ্চিত হয়নি। গণতন্ত্র, সুশাসন ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসূ তা বলা যাবে না। করোনাকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে।

বিশেষ অতিথির ধারণ করা বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ত্রয়োদশ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পরিষদের নতুন নেতাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মহিলা পরিষদকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া অভিবাসী নারীদের নিরাপত্তা, যথাযথ অভিবাসন এবং জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চালু করার বিষয়ে সংগঠনকে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্রিস্টিন জোহানসন বলেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ, সমঅংশীদারত্ব নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে নারী-পুরুষের মানবাধিকারকে সমানভাবে মর্যাদা দেওয়া এবং প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে যেন বিবেচনায় নেওয়া হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম বলেন, আজকের এ মহতি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, যারা গত আট মাস আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, আদালতে আমার জন্য উপস্থিত থেকেছেন কিংবা আমার জন্য রাস্তায় নেমে বা সামাজিকমাধ্যমে একটিও শব্দ উচ্চারণ করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মহিলা পরিষদ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নারীদের জন্য কাজ করছেন। এসময়ে নারীদের অগ্রগতি হয়েছে, তবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে। যে কোনো সহিংসতার ঘটনায় নারীদের হেনস্থার শিকার হতে হয়, তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। নানা ধরনের সহিংসতার পাশাপাশি বেশিরভাগ নারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্মা।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট থেকে একটি র্যালি বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে এসে শেষ হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন