শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বালু উত্তোলনে ভাঙন আতঙ্ক

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গড়াই নদী

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের লালন আবাসন এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে গেল বর্ষায় ভাঙন লেগেছিল। অনেক দেরিতে হলেও ভাঙনরোধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে আবাসনবাসীর এখনো কাটেনি ভাঙনের আতঙ্ক। নদীতে পানি কমার সাথে সাথে বাড়ছে আতঙ্কও। অপরদিকে ভাঙনের আশঙ্কার মধ্যে আবারোও শুরু হয়েছে ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন। এতে আগামী বর্ষায় আবাসন তিনটি বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন বসবাসকারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালন আবাসন থেকে মাত্র ৪০০ মিটার পূর্বে এবং গড়াই নদীর উপর যদুবয়রা নির্মাণাধীন সেতু থেকে প্রায় ৩০০ মিটার পশ্চিমে দুইটি ভ্যেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে রাত-দিন। সেই বালু আবার অবৈধ সেলোইঞ্জিতচালিত বাটাহাম্বা গাড়িতে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তায় চলাচলে বেড়েছে ঝুঁকি।
বালু উত্তোলনকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, মাসুদ রানা নামের একজন বালু ব্যবসায়ী সরকারের কাছ থেকে নদীর বালু মহালটি ২৭ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। ইজারা সুত্রে এখন ওই অংশ মাসুদের। তাই তারা বালু উত্তোলন শুরু করেছে। বালু উত্তোলনের স্থানে থাকা রফিকুর নামের এক কর্মচারী বলেন, মাসুদ ভাই ইজারা নিয়েছেন। ইজারার বালু কাটছি আমরা। কার কি ক্ষতি হলো তা আমাদের দেখার নেই। এবিষয়ে ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, স্থানটির ইজারা পেয়েছি ২৭ লাখ টাকায়। প্রশাসনের দেখানো স্থানে বালু কাটা হচ্ছে। আবাসনবাসী জানায়, শুষ্ক মৌসুমে আবাসন সংলগ্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে চলতি বছর জুলাই মাসের দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে চলাচলের একমাত্র রাস্তাসহ চারপাশ প্লাবিত হয়েছিল। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছিল ৫১টি পরিবার। গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন আমলে নেন এবং কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে দেড়মাস পূর্বে জিওব্যাগ ফেলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে হাঁসদিয়া লালন আবাসন-১ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। আবাসন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে আগামী বর্ষায় লালন আবাসন-৪ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুমারখালী উপজেলা প্রকল্প কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে নির্মিত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প হাঁসদিয়া লালন আবাসন-১, পৌর লালন আবাসন-২, নন্দলালপুর লালন আবাসন-৩ ও যদুবয়রা লালন আবাসন-৪। প্রতিটি আবাসনে ৬০টি করে মোট ২৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। তন্মধ্যে ২০১৩ সালে গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় হাঁসদিয়া আবাসনের ৫১টি ঘর। বর্তমানে তিন আবাসনে ১৮৯টি ঘরে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে।
এবিষয়ে যদুবয়রা লালন আবাসন-০৪ সাধারণ সম্পাদক আকুল মন্ডল জানান, গেল বছর অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে এবার আবাসন এলাকায় ভাঙন লেগেছিল। ভাঙনের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। আগামী বর্ষায় আর টিকা যাবেনা এখানে। সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, এবছর আবাসনের পাড় ভেঙে পানি ঢুকেছিল। আমরা পানিবন্ধি ছিলাম। বালু কাটা বন্ধ না হলে আবাসন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল জানান, গেলবার বালু উত্তোলনের ফলে আবাসনে ভাঙন লাগার অভিযোগ পেয়েছিলাম। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এবারো বালু উত্তোলন হচ্ছে বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন