কবরখানা বিষাদের জায়গা, সেখানে প্রিয় মানুষকে বিদায় জানাতে হয়৷ কিন্তু রুমfনিয়ার একটি গ্রামে এক সমাধিক্ষেত্রে আনন্দময় ও কৌতুকের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ফলে পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছেন, গ্রামের মানুষেরও আয় হচ্ছে৷
রুমানিয়ার উত্তরে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সাপুনৎসায় ‘আনন্দময় কবরস্তান' অবস্থিত৷ ক্রস মেকার হিসেবে দুমিত্রু পপ সেখানে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নীল মোমবাতির উপর কবিতা ও ছবি দিয়ে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন৷ দুমিত্রু একটি সমাধির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলেন, ‘‘শাশুড়ি ও জামাইয়ের মধ্যে জটিল সম্পর্ক এখানে তুলে ধরা হচ্ছে৷ জামাই এখানে শাশুড়িকে দাফন করেছেন৷''
বেঁচে থাকতে শাশুড়ি তার কুঁড়ে জামাইকে মেলা গালি দিয়েছেন৷ তাই দুমিত্রুর কবিতার মধ্যে মানুষকে চুপচাপ থাকতে বলা হয়েছে৷ তা না হলে সেই নারী নাকি আবার জেগে উঠে গালিগালাজ শুরু করে দেবেন৷ দুমিত্রু পপ মনে করেন, আনন্দময় কবরস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই গোটা বিশ্বে একমাত্র জায়গা যেখানে মৃত্যু নিয়ে হাসাহাসি করা হয় এবং মৃতদের জীবনের কাহিনি নিয়ে চর্চা হয়৷
সাধারণত রুমানীয় অর্থোডস্ক সম্প্রদায়ের কবরখানা অত্যন্ত বিষাদময় ও ধূসর দেখতে লাগে৷ কিন্তু সে দেশের এক ছুতার মিস্ত্রী ব্যাতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছিলেন৷ প্রায় ৮৫ বছর আগে স্টান ইওয়ান পাত্রাশ এই ‘আনন্দময় কবরস্থান' সৃষ্টি করেন৷ তিনিই দুমিত্রুকে কাঠের কাজ শিখিয়েছিলেন৷ মাত্র নয় বছর বয়সে দুমিত্রু সেই কাজ শুরু করেছিলেন৷
সেই সংযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়েই ইওয়ান পাত্রাশ শিল্পকলায় প্রতিভা খুঁজতে আমাদের কাছে এসেছিলেন৷ আঁকার ক্লাসে সেরা হওয়ায় তিনি আমাকেই বেছে নিয়েছিলেন৷ সত্যি এখন তাঁর অভাব বোধ করি৷ আমরা মানুষ এবং মানুষের মনে আবেগ থাকে৷ কিন্তু এটাই তো জীবন৷ একজন যায়, আরেক জন আসে৷''
দুমিত্রু এখনো পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ক্রস তৈরি করেছেন৷ তিনি প্রত্যেকটি ক্রসের কাহিনি আলাদা করে জানেন৷ যেমন একটি ক্রস তার একেবারে প্রথম দিকের সৃষ্টি৷ সামনের দিকে মৃত ব্যক্তির জীবন এবং পেছনে মৃত্যু সম্পর্কে কিছু লেখা আছে৷ বাচ্চা মেয়েটি মাত্র চার বছর বয়সে ট্যাক্সি চাপা পড়ে মারা যায়৷
এই গ্রামে সবাই সবাইকে চেনে৷ দুমিত্রু পপ শুধু জীবিত মানুষ নয়, মৃতদের সম্পর্কেও অনেক কিছু জানেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে একটা ঐতিহ্য রয়েছে৷ সবাই মিলে বিদায় জানাতে মানুষ মৃতদেহ তিন দিন বাসায় রাখেন৷ আমাদের এখানে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে অভিযোগ করা হয় না, তাকে নিয়ে গান গাওয়া হয়৷ মৃতের জীবন সম্পর্কে চটজলদি গান বাঁধা হয়৷ সেটা থেকে আমি প্রেরণা পাই৷''
মাঝে মধ্যে মুখোরচক কাহিনি সম্পর্কে এখানে কেউ চটে যায় না, অন্তত প্রকাশ্যে নয়৷ কারণ, গোটা গ্রামের আয় কবরখানার উপর নির্ভর করে রয়েছে৷ অঞ্চলের অন্যতম দৃষ্টব্য হিসেবে জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়৷ রুমানিয়ার ‘আনন্দময় কবরখানা' আসলে একটি গোটা গ্রামের মানুষের জীবনের কাহিনির অনবদ্য সংগ্রহ৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন