বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। পাহাড়ি বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে খাগড়াছড়ির বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামীণ পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুঁড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।
একসময় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর বাগান চোখে পড়ে না। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ি টিলায় একসময় বিভিন্ন জাতের.বাঁশ জন্মাতো। এ বাঁশ দিয়েই বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো স্থানীয়রা। নির্বিচারে বাঁশ কড়ুল ধ্বংসের কারণে বাঁশের বংশ বিস্তার কমে যাচ্ছে।
মাটিরাঙ্গার আদর্শ গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর মো. রহমত আলী বলেন, ‘বাঁশের তৈরির বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাাস্টিক পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ-বেত শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
বাঁশ-বেতে তৈরি জিনিসের স্থানীয় পাইকারী ক্রেতা মো. আলী আশরাফ বলেন, একসময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।
পলাশপুর এলাকার বাঁশ শিল্পের কারিগর মো. দুলাল মিয়া, আয়েশা আক্তার ও রহিমা বেগম বলেন, কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ায় আমরা এখন অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে পুরোনো পেশা ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজি আর উপকরণের অভাবে সে প্রচেষ্টা থমকে গেছে। আমরা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ঋণ সহায়তা কামনা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন