অর্থনৈতিক রিপোর্টার : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নিরাপদ পানির আওতার বাইরে থাকা দুই কোটি ৮০ হাজার (১৩ শতাংশ) এবং উন্নত স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত ৬ কোটি ২৪ লাখ (৩৯ শতাংশ) মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের পর মাত্র ৪০ ভাগ পরিবার পয়ঃনিষ্কাশনে পানি ও সাবান ব্যবহার করছে। তবে এখনো এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছে। এখাতে এসডিজি অর্জনে বেসরকারি উদ্যোক্তা তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, ঋণের হার কমানোসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অর্জনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা র্ডপ’র সহায়তায় বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালায়েন্স সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালায়েন্সের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, মাত্র এক যুগের ব্যবধানে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের হার ৪২ ভাগ থেকে এক ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। বর্তমানে জনসংখ্যার ৬১ ভাগ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা ভোগ করছে। অবশিষ্টদের মধ্যে ২৮ ভাগ যৌথভাবে আধা-পাকা এবং ১০ ভাগ সাধারণ ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হিসেবে কাজ করছে।
অলক কুমার মজুমদার বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে এই বাধা দূর করা সম্ভব। তবে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও কিছু বিষয় বাধা হিসেবে কাজ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা ভূমি স্বল্পতা, ৯০ শতাংশ ঋণ জামিনদার, ৯০ শতাংশ উচ্চমাত্রার সুদ, ৭০ শতাংশ মূলধনের স্বল্পতা, ৬৫ শতাংশ ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব এবং ৬০ শতাংশ অদক্ষতার কারণে কাজের অগ্রগতি লাভে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালায়েন্স’ স্যানিটেশন সুবিধা বাড়াতে উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সুবিধাজনক দাম, কারিগরি জ্ঞান, যানবাহনের সুবিধাসহ যাবতীয় বিষয়ে সাহায্য করে আসছে। পাশাপাশি ১১ হাজার ৫০০ জন মানুষের মধ্যে এক হাজার ৯২০ জনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালায়েন্সের চেয়ারপার্সন ও ওয়াটারএইডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খায়রুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম মুক্তা, নেদারল্যান্ডস্থ ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’র কান্ট্রি লিড সারা আহরারি, র্ডপ’র চেয়ারম্যান মো. আজহার আলী তালুকদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ, বিশ্বব্যাংকের পানি ও স্যানিটেশন স্পেশালিস্ট রোকেয়া আহমেদ, সিইজিআইএস-এর ডিরেক্টর এটিএম শামসুল আলম, র্ডপ’র গবেষণা প্রধান মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান, উদ্যোক্তা সাতক্ষীরার চন্দন হিলা, রহুল আমিন ভূইয়া ও মোস্তাক আহমেদ সিদ্দিকী, পটুয়াখালীর চাঁদ মিয়া, রামগতির র্ডপ-উচ্ছ্বাস স্যানিটেশন বিতানের উদ্যোক্তা গুলশান আরা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সরকারী-বেসরকারী সকলকে সাথে নিয়ে এসডিজি অর্জনে কাজ করতে হবে। বেসরকারী উদ্যোক্তা বাড়াতে পানি ও স্যানিটেশন খাতে ব্যাংক ঋণের হার কমানোর জন্য পর্যালোচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিকেএসএফ এগিয়ে আসতে পারে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় আমাদেরকে আরো কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার উন্নয়ন কর্মকা-গুলো সংখ্যার বিচারে নয়, গুণগত মানের বিচারে দেখছে। বর্তমান সরকার ৮০ ভাগ লোকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। আগামী ২/৩ তিন বছরের মধ্যে সরকার শত ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন