শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কৃষকের চোখে রঙিন স্বপ্ন

টাঙ্গাইলে হলুদের সমারোহ

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

পৌষের বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা মাঠভরা সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ ও সৌরভ চারদিকে। ভোরের মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করা হলুদ সরিষা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য এখন গ্রামে গ্রামে লুটোপুটি খাচ্ছে। সরিষা ফুলে মৌ-মাছিরা গুন গুনিয়ে মধু আহরণ করছে। টাঙ্গাইলের যেকোন এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সোনাঝরা ফুলের সীমাহীন বাগান। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ দু’পাশে দিগন্ত হারানো হলুদের সমারোহ। হলুদে হলুদে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দিচ্ছে সম্ভাবনার অমীয় হাতছানি।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ৪৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মৌসুমের শুরুতে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঝুঁকি দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠকর্মীদের তৎপরতা ও পরামর্শে কৃষকরা সরিষা চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস পায়। ফলে ইতোমধ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৭০০ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জেলার ১২টি উপজেলায় সরিষার আবাদ বাড়ানোর লক্ষে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য), অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্যান) এবং স্ব স্ব উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার।
সূত্রমতে, গত দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কৃষকরা অধিকাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করতে পারেনি- সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, গত বছর সরিষার বাজারমূল্য আশানুরূপ হওয়া, কৃষি প্রণোদনার আওতায় জেলার ২৪ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে এক কেজি বীজ ও সার প্রদান এবং সার্চ কমিটির তৎপরতার কারণে কৃষকরা বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ১২টি উপজেলায় মোট ৪৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৯০ হেক্টরে ছয় হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন, বাসাইলে চার হাজার ৮২০ হেক্টরে পাঁচ হাজার ৭৮৪ মেট্রিক টন, কালিহাতীতে তিন হাজার ১৩০ হেক্টরে তিন হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন, ঘাটাইলে দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টরে দুই হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন, নাগরপুরে ১০ হাজার ১০০ হেক্টরে ১২ হাজার ১২০ মেট্রিক টন, মির্জাপুরে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টরে ১০ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন, মধুপুরে ৪৬৫ হেক্টরে ৫৫৮ মেট্রিক টন, ভূঞাপুরে এক হাজার ৮৩০ হেক্টরে দুই হাজার ১৯৬ মেট্রিক টন, গোপালপুরে তিন হাজার ৬০০ হেক্টরে চার হাজার ৩২০ মেট্রিক টন, সখীপুরে দুই হাজার ১৪০ হেক্টরে দুই হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন, দেলদুয়ারে দুই হাজার ৫৫০ হেক্টরে তিন হাজার ৬০ মেট্রিক টন, ধনবাড়ী উপজেলায় ৪৭০ হেক্টরে ৫৬৪ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্চ কমিটির তৎপরতা ও প্রণোদনার ফলে হাল জরিপে চার হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের দিগন্তজোড়া হলুদরাঙা সরিষার রাজ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৌয়াল বা মৌচাষিরা সারি সারি মৌবাক্স বসিয়ে সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে। এর ফলে সরিষায় পরাগায়ণের মাধ্যমে আবাদ শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেশি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতের পাশে সারি সারি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কাজে ব্যস্ত মৌয়াল বা মৌচাষী। নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখান থেকে মধু বিক্রিও করা হচ্ছে। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবার ৪৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৫০ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় আমন ধান চাষ ভালো না হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন