ঋতু পরিবর্তনের পালাক্রমে শীত আসে। আর এই শীতে সর্বত্রই ঠাণ্ডা-সর্দি, কাশি, জ¦র, গলাব্যথাসহ নানান ধরণের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। শীতের তীব্রতা মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে। শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় বৃদ্ধ ও শিশুরা। পশু-পাখি, জীবজন্তুর কষ্ট অপরিসীম। শীতের শুষ্ক হওয়ার দাপটে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ত্বক দেখতে লাগে অমসৃণ ও খসখসে। তাই এই শীতের মৌসুমে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চলুন জেনে নিন শীতকালে ভালো থাকার উপায় ও ত্বকের পরিচর্যা সম্পর্কে-
* সবার প্রথমে ত্বকের আদ্রর্তা বজায় রাখাটা খুব দরকার, তাই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে আর বারবার পানির ঝাপটা চোখে মুখে দিতে হবে। ঠাণ্ডার কারণে শীতে পানি কম পরিমাণে খাওয়া হয়। এটা কিন্তু একদমই ঠিক নয়। প্রতিদিন ৪-৫ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তাতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
* যাদের লিভার সমস্যা, বদহজম, হাত-পা জালাপোড়া করে, তারা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। সমস্যা বেড়ে যাবে। তারা পানি রোদে গরম করে গোসল করুন।
* শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল করা অত্যাবশ্যক। তাদের গোসল অবশ্যই দিনের বারোটার আগে করা স্বাস্থ্যসম্মত।
* প্রতিদিন ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন, এতে ত্বকের তৈলাক্ততা বজায় থাকবে। উষ্ণ-গরম পানি আপনার শরীরে তৈলাক্ত ভাব নষ্ট করে দেয়।
* প্রতিদিন গোসলের আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
* গোসলের পরে ভালো করে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগান।
* রোদে বেড়ানোর ৩০ মিনিট আগে যেকোনো সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন।
* ত্বক ভালো রাখতে পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। যেমন- সবুজ শাকসবজি, মাছ, দুধ, ডিম ইত্যাদি।
* বেশি করে টাটকা ফল খান। যেমন- আপেল, কমলালেবু, আনারস, পাকা পেঁপে ইত্যাদি।
* ত্বকে টমেটোর রস লাগালে খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার কাজ করে।
* আনারস, আপেল, পেঁপের রস মধুর সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের জেলা দেয়।
* ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে অলিভ অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগান।
* কয়েক ফোঁটা মধুর রস অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাটা কমবে তা ছাড়াও আপনি ঠোঁটে জেল, ভেসলিন ব্যবহার করতে পারেন।
* রাতে শোবার আগে হাতে-পায়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে নিন।
* কবিরাজ ও হেকিমরা বলেন, শীতে গরম ও ঠাণ্ডা মিশ্রিত পানিতে কয়েকটি নিম পাতা ফেলে আধ ঘন্টা পর গোসল করলে শীতে চর্মরোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
* শীত ও গ্রীষ্ম সব ঋতুতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করা উচিত। গোসলের পানিতে কয়েক ফোটা জীবাণুনাশক ডেটল বা স্যাভলন ফেলে দিয়ে বা মিশিয়ে গোসল করা উচিত। গরম পোশাক-
* শীতে ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। শীতে ভাইরাস সংক্রান্ত রোগ (যেমন-সর্দি, কাশি) থেকে দূরে থাকতে গরম পোশাক পরুন। গরম পোশাক পরার সাথে সাথে খেয়াল রাখবেন যাতে সেটি যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, কারণ অপরিচ্ছন্ন জামা-কাপড়ে ভাইরাস বেশি বাসা বাঁধে। বিশেষ করে শিশুদের সব সময় পরিষ্কার গরম পোশাক পরিয়ে রাখার অভ্যাস করুন যাতে ঠাণ্ডা না লাগে। শীতে ভালো থাকার উপায় ও গরম পোশাকের অবদান অপরিহার্য।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন- যখন আমরা শীতে ভালো থাকার উপায় বিষয়টি আলোচনা করি, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার কথা এড়িয়ে যেতে পারি না। পানি আমাদের শরীরে মিনারেল এর কাজ করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীর ড্রি-হাইড্রেট হয় না। প্রতিদিন অন্তত ৯-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
জানেন তো, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- নিজের যত্ন না নিলে নিজে- অন্যের ওপর ভরসা মিছে।
মো. লোকমান হেকিম
চিকিৎসক, কলামিস্ট
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন