মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে নেয়া সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণে ধীর গতি

প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজে অগ্রগতি আনতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০টি আবর্জনার ভাগাড় বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিভিন্ন বাধার কারণে পুরোদমে শুরুই করা যাচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম অবস্থায় ১৫টি এসটিএস নির্মাণ করার তালিকা চূড়ান্ত করে কর্পোরেশন। নির্মাণকাজের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, কাজে ত্রæটি, স্থানীয়দের বাধা, জমি নিয়ে বিরোধ ও বেদখলের কারণে প্রায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও প্রকল্পের কাজ শুরুও করা যায়নি। এসটিএস নির্মাণের স্থানগুলো সিটি কর্পোরেশন তার নিজস্ব জায়গা হিসেবে দাবি করলেও প্রভাবশালীদের কেউ কেউ জাল দলিল ও জালিয়াতি করে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত থেকে কিছু কিছু স্থানে প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশও রয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন নগরীতে ২ থেকে আড়াই হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তবে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এসটিএস নির্মাণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে চান না নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত এ বিষয়টি নিয়েই বিপত্তি।
হাতে নেওয়া ৫০টি এসটিএসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৫টির মতো নির্মাণকাজের উদ্যোগ নিয়েছে কর্পোরেশন। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে। তবে যে কয়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১২টিতেই রয়েছে নানা সমস্যা।
যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার
উপ-প্রকল্প পরিচালক (বাস্তবায়ন) উত্তমকুমার কর্মকার জানান, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের উত্তর পাশের খালি জায়গায় এসটিএস নির্মাণ করার জন্য ২২নং ফাইলের কাস্টিং কাজ চলাকালীন কর্পোরেশন অঞ্চল-৫ থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে মেয়র প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ওই বাজারে উৎপাদিত বর্জ্য রাখতে ছোট আকারের শেডে’র স্থানে এসটিএস নির্মাণের নির্দেশ দেন। যে কারণে এটি এখনো নির্মাণ শেষ করা যাচ্ছে না।
নিউ মার্কেট
প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান নিউ মার্কেটের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে এসটিএস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পান্থকুঞ্জে তা স্থানান্তর করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে তাতে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তাছাড়া পান্থকুঞ্জ পার্ক নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় এ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সিটি কর্পোরেশন।
প্রগতি ডেইরি ফার্ম
এ প্রকল্পটির নির্মাণকাজে বিভিন্ন ত্রæটি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ভ্যান ও লিফটার মটরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, বৈদ্যুতিক বাল্ব পরিবর্তন অফিসের বৈদ্যুতিক পাখা সাইট ওয়ালে স্থাপন ও স্টোররুমের দরজা না লাগানোসহ একাধিক ত্রæটি ধরা পড়েছে। এজন্য এর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
জুরাইন কবরস্থান
চলতি বছরের মধ্যে জুরাইন কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় এসটিএসটি স্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে দাবি করলেও, তা এখনো শেষ হয়নি।
মেটাডোর, হাজারীবাগ
হাজারীবাগের মেটাডোর এলাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলে স্থানীয় এক বাসিন্দা তার বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেন। এতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে সিটি কর্পোরেশন মনে করছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রিটকারির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব। এজন্য সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আকাশ অটো মটর ওয়ার্কশপ
২০১৩ সালের দিকেই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকে শিকদার মেডিকেলের বাধার কারণে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তাছাড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য এসটিএস নির্মাণের স্থানটিসহ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২৪১ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যে কারণে এ প্রকল্পটিও স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এ স্থানটিতেই প্রকল্পটি স্থাপন করতে চায় সিটি কর্পোরেশন। এজন্য কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ থেকে প্রকল্পের সীমানা নির্ধারণ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে হবে।
ঢাবির ফিজিক্যাল মাঠের দক্ষিণ পাশের গ্যারেজ সংলগ্ন খালি জায়গা
এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেও আপত্তি রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে প্রধান করে এসটিএস নির্মাণের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ স্থানটির পরিবর্তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেট সংলগ্ন খালি জায়গায় এসটিএস নির্মাণের জন্য মতামত দেয়। সিটি কর্পোরেশনও তাতে সম্মতি দিয়েছে।
ওসমানী উদ্যানের খালি জায়গা
ওসমানী উদ্যানের ওয়াকওয়ে বিনষ্ট, পরিবেশবাদীদের মামলা ও পরিবেশ বিনষ্টের কথা চিন্তা করে এতে এসটিএস নির্মাণ না করার মতামত দিয়েছেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল। তাছাড়া সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও পার্কের পরিবেশের কথা চিন্তা করে এ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেন। ফলে এসটিএস নির্মাণের জন্য বিকল্প স্থান খুঁজছে ডিএসসিসি।
ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন খালি জায়গা
এ এলাকায় এসটিএস নির্মাণে আপত্তি রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের। তবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ঝুলে আছে এর নির্মাণ কাজ।
ধলপুর স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন পুরনো এসটিএসের খালি জায়গা
সিটি কর্পোরেশনের এসটিএস নির্মাণ প্রকল্পটির এ স্থানটি নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু তবু কাজ শুরু করতে পারছে না সংস্থাটি। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নবাবগঞ্জ পার্কের পাশের খালি জায়গা
সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন এ স্থানটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়েছে। কিন্তু এতে এসটিএস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও স্থানটিতে তা নির্মাণে স্থানীয়দের বাধা রয়েছে। ফলে প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমরা অর্ধশত এসটিএস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু জমি সংক্রান্ত মামলা, স্থানীয়দের বাধাসহ বিভিন্ন কারণে এ কাজটি সুস্থভাবে এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। এটা নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আশা করি দ্রæত সমাধান হয়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন