‘যশোরের দুঃখ’ ভবদহ পানিবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টিআরএম চালুসহ ৫ দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে গতকাল রোববার দুপুর থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির সূচনা হয়। এসময় টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে তারা শ্লোগান, বক্তৃতা করেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষ সেখানে অবস্থান নেন। একইসাথে তাদের দুঃখ দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বহন করেন ব্যানার, প্লাকার্ডও। এসময় তারা কৃষি যন্ত্রপাতি ও ধান ফেলে রেখে প্রতিবাদ জানান। গতকাল প্রথম দিন বেলা ১১টা থেকে শুরু করা হয়েছে লাগাতার এ কর্মসূচি। আজ থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, চার বছর ধরে পানিবদ্ধতার সমস্যায় ফের নিমজ্জিত হয়েছেন তারা। বাড়ি, মাঠ-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির সবকিছু পানির নিচে। এতে করে কর্মসংস্থান যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি তাদের সন্তানরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিমুখ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পানিবদ্ধতাকে ঘিরে ব্যবসা শুরু করায় এর থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন ও কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
একইসাথে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার এ কর্মসূচি চলবে বলে জানান সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালি। তিনি আরো বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করবেন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজসে ভবদহবাসীকে ডুবিয়ে মারার একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আমরা দাবি করছি আমডাঙ্গা খাল প্রসস্থ করে খনন, বিল কপালিয়ায় টিআরএম এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিলে টিআরএম চালু করে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও পানিবদ্ধতার অবসান ঘটাতে হবে। একইসাথে উজানে পদ্ম-মাথাভাঙ্গা-ভৈরবের নদী সংযোগের সাথে মুক্তেশ্বরী নদীকে যুক্ত করে প্রবাহমান করতে হাবে। তা হলেই কেবল সমস্যার সমাধান হবে। ইকবাল কবির জাহিদ আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রভাবশালী রাজনৈতিকদের ‘টাকা কামানোর মেশিন’ করা হয়েছে ভবদহকে। তারা ২০১৩ সাল থেকে প্রতিশ্রুতি ও প্রতিশ্রুতির ভঙ্গের মাধ্যমে জনগণের সাথে অব্যাহত প্রতারণা করা হচ্ছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলেন, এখন চলছে বোরো মৌসুম। কিন্তু পানিবদ্ধতার কারণে ভবদহ এলাকার গ্রামে গ্রামে এখনো পানি জমে আছে। অনেকের উঠানে এখনো কোমর পানি। ফলে শত শত একর জমি এবার আবাদ না হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। ফলে কৃষির উপর নির্ভরশীল এই জনপদের মানুষ আছেন মহাসংকটে। নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, ভবদহ অঞ্চলকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তাবিত ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ’ প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন ভবদহ পানি নিষ্কাশনের কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, নাজিমউদ্দিন, তসলিম উর রহমান, হাচিনুর রহমান। আরোও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আফসার আলী, অধ্যাপক আমিরুল আলম খান, আজিজুল হক মনি, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী সাঈদ আহমেদ বুলবুল প্রমুখ। এর আগে গত ২ জানুয়ারি এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ওই দিনই দাবি মানা না হলে লাগাতার এই অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন