শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বিলুপ্তির পথে লৌহজংয়ের ঐতিহ্যবাহী পিতল-কাঁসা শিল্প

মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় লৌহজং থেকে হারিয়ে গেছে বাংলার ঐতিহ্য পিতল কাঁসা শিল্প। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার দীঘলি বাজার কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত ছিল। আগে উপজেলায় বিয়েসহ সামাজিক সব অনুষ্ঠানে পিতল কাঁসার জিনিসপত্র উপহার দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। পিতল কাঁসার নিখুঁত নকশার এসব তৈজসপত্র ওজন ও নকশা দিয়ে মূল্যায়ন হতো। ওই সময় শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও ছিল এর প্রচুর চাহিদা। এছাড়া বিদেশী পর্যটকরা একসময়ে কাঁসা-পিতলের মধ্যে কারুকাজ খচিত বিভিন্ন দেব-দেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যেতো।

এক সময়ে লৌহজংয়ের দীঘলি বাজারের কাঁসা, তামা ও পিতল শিল্পের খুব সুনাম ছিলো। বিয়েসহ সব সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পিতল কাঁসার জিনিসপত্র দেয়া হতো। আবার উপহার পাওয়া পিতল কাঁসার জিনিসপত্র পুরাতন হয়ে গেলে বাজারে নিয়ে পলিশ (ছিলে) করিয়ে আবার নতুনের মত চকচকে করা হত। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি পুরাতন ছিল। পলিশ করানো পিতলের জিনিসপত্র পুনরায় অন্যত্র সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেয়া হত।

জানা যায়, ১৫৭৬ থেকে ১৭৫৭ সালে মোগল শাসনামলে এদেশে তামা, কাঁসা ও পিতলের ব্যবহার শুরু হয়। এসব ধাতু দিয়ে তারা ঢাল, তলোয়ার, তীর, ধনুক, বন্দুক এবং কামান তৈরি করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এই শিল্পের প্রসার ঘটে এবং বাংলার ঘরে ঘরে এর ব্যবহার শুরু হয়। শুধু তাই নয়, বিত্তশালী পরিবারগুলোতে এসব পণ্য খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সুবাদে এই শিল্পের ছোট বড় অনেক কারখানা গড়ে ওঠে। লৌহজংয়ের দিঘলী বাজারে একসময় কলকাতা হতে নৌপথে লৌহসামগ্রী আমদানি হতো। লৌহ ও জংশন শব্দ দু’টির সংযোগে লৌহজং শব্দটির উৎপত্তি বলে অধিকাংশের ধারণা।

শত শত বছর ধরে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থালা বাসন, কলস, জগ, বদনা ও গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার হত কাঁসা পিতলের তৈরি সামগ্রী। এমনকি জমিদাররাও ব্যবহার করত এ ধরনের তৈজসপত্র। বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী হিসেবে সকলের গৃহে শোভা পেত কাঁসা পিতলের তৈরি মনোমুগ্ধকর সামগ্রী। এমনি করে সকলের কাছে এর যথেষ্ট কদর ছিল। নিত্য নতুন সিরামিক, মেলামাইন, কাঁচ ইত্যাদির সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ পিতল-কাঁসার ব্যবহার একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। নিকট অতীতেও পিতল-কাঁসা সামগ্রী গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নিত্য ব্যবহৃত সামগ্রী হিসেবে দেখা যেতো। বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ার সাথে সাথে এসবের ব্যবহারে ভাটা পড়েছে।

এ ব্যাপারে লৌহজংয়ের কোকারিজ ব্যবসায়ী ফজল আলী বলেন ৯০ দশকে বিয়ে-সাদি সামাজিক সব অনুষ্ঠানে পিতলের কলস পান দান ডেক ও কাঁসার জিনিসপত্র উপহার দিত। এখন বিয়ে সাদিতে ডিনার সেট ও কাঁচের জিনিসপত্র উপহার হিসেবে দেয়া হয়। এখন আর পিতলের কদর নেই তাই অনেক আগেই পিতলের জিনিসপত্রের ব্যবসা বন্ধ করে দিছি।

তামা, কাঁসা ও পিতলের পণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়া, মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং কারিগরদের পেশা বদলের ফলে এ শিল্প এখন হুমকির মুখে। অপরদিকে অত্যাধুনিক, বৈচিত্র্যময় ও স্বল্প মূল্যের প্লাস্টিক এবং মেলামাইনের পণ্য সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না এই শিল্প। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সাথে জড়িত শিল্প ও ব্যবসায়ীরা মন্দা গতির কারণে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। ফলে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঁসা, তামা ও পিতল শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন