শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শিশু-কিশোরদের কুসিং সিনড্রোম

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

অনেক ছেলে-মেয়ের ওজন হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর তখন এটা বাবা-মার জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদের কারো কারো এ সমস্যাটির পিছনে যে হরমোনটির অতিরিক্ত উপস্থিতি বিরাজমান তাহলো গ্লুকোকর্টিকয়েড।

কুসিং সিনড্রোম দু’ধরণের হতে পারে ঃ একটি এড্রেনাল গ্রন্থির (গ্লুকোকর্টিকয়েড প্রধানত এখানেই উৎপাদিত হয়) টিউমার জনিত কারণে হয়। আবার পিটুইটারি গ্রন্থির অতিরিক্ত এসিটিএইচ উৎপাদনের কারণেও কুসিং সিনড্রোম হতে পারে। কোন কোন সময় অস্বাভাবিক স্থান থেকে গ্লুকোকর্টিকয়েড তৈরি হয়েও কুসিং সিনড্রোম হতে পারে।

কুসিং সিনড্রোম ছেলেদেরকেই বেশি আক্রান্ত করে। কিন্তু মর্মান্তিকভাবে লক্ষ্যনীয় যে, অনেক ছেলে-মেয়ে বিভিন্ন কারণে গ্লুকোকর্টিকয়েড সেবন করায় কুসিং সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়। এদেরকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কবিরাজি, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আরো এরকম ওষুধ সেবনের নামে অপ্রয়োজনে বা অহেতুক দীর্ঘকাল যাবৎ এরকম একটি অতিকার্যকর ওষুধ সেবন করানো হয়। আরও পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেক সনদবিহীন চিকিৎসকও হরহামেসাই জেনে না জেনে এসব ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছে। ফলে রুগীর উপকারের আড়ালে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছেন।

কুসিং সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা দৈহিক স্থূলতায় ভুগতে থাকে। যদিও এদের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। দৈহিক স্থ’ূলতা শরীরের সকল অংশেই সমানভাবে বিরাজমান হতে পারে। এদের মুখের ত্বকে একটি লালাভ আভা থাকে। মুখে বা অন্যান্য জায়গার ত্বকে ব্রণ দেখা দিতে পারে। ত্বকের কোন জায়গাতে সামান্য আঘাতে রক্তক্ষরণ হবার প্রবণতা দেখা দেয়। পেটে, উরুর ভিতরের দিকে অথবা বাহুর উপরের দিকে হালকা বেগুনী রং এর লম্বাটে দাগ হতে পারে। মুখ বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় অবাঞ্চিত লোম হতে পারে। এরা মানসিকভাবে খুবই অস্থির হয়ে যায়। কারো কারো মাথা ব্যথা হয়, মাংসপেশির দূর্বলতা দেখা দেয় এবং অবষন্নতা বোধ করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকারও সম্ভাবনা আছে। বিলম্বিত বয়োঃসন্ধির হার এদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এদের হাড় ক্ষয়ে যাবার ঝুঁকি থেকে যায়।

ক্রমশ: ওজন বৃদ্ধির সাথে উচ্চতা বৃদ্ধি না হওয়াটা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দিতে থাকে। তবে অস্বাভাবিক স্থান হতে এসিটিএইচ তৈরি হলে লক্ষণগুলো খুব দ্রুত দেখা দেয়।

শুরুতেই রোগীটি গ্লুকোকর্টিকয়েড (ইনজেকশন, ক্রীম, লোশন, স্প্রে বা ট্যাবলেট যে ভাবেই হোক) সেবন করেছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কুসিং সিনড্রোম সনাক্ত করা বেশ জটিল। ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে কর্টিসোল দেখা হয়। দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা দেখা হয়। মধ্য রাতে লালায় কর্টিসোলের মাত্রা দেখেও অনেক সময় রোগ সনাক্ত করণে চেষ্টা করা হয়। ডেক্সামেথাসন সাপ্রেশন টেষ্ট করা হয় অনেক সময়। এগুলোর সাথে রক্তে এসিটিএইচ এর মাত্রার সমন্বয় লক্ষ্য করা হয়। এড্রেনাল গ্রন্থির আল্ট্রাসনোগ্রাম, অনেক ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান টিউমারের উপস্থিতি সনাক্ত করতে সমর্থ হয়।

রোগ সনাক্ত করার পরে চিকিৎসা প্রদানের আয়োজন করা হবে। কিন্তু সেটিও খুব সহজ-সরল নয়। যদি এড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার পাওয়া যায় এবং তা অপারেশন করে দূর করা যায়, তাহলে সবচেয়ে ভাল ফলাফল আশা করা যেতে পারে। কিন্তু যেখানে অপারেশন সম্ভব নয়, সেখানে বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, যদিও অনেক ক্ষেত্রে এর ফলাফল খুব বেশি আশা ব্যাঞ্জক নয়। পিটুইটারি টিউমার হলে এর অপারেশন করে বা রেডিও থ্যারাপি দিয়েও অনেক সময় ভাল ফল পাওয়া যায়।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
মোবাইল নং ০১৯১৯০০০০২২
Email: selimshahjada@gmail.com

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন