বিধি নিষেধের শুরুর দিনেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কমেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী আর স্থানে স্থানে চেকপোস্টসহ করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিরসনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এমন কড়াকড়ি প্রভাব পড়েছে দাবি করেন মেলার ব্যবসায়ীরা। এদিকে লোকসানের কথা মাথায় রেখেই আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরে প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিক ওমিক্রন ও করোনা মহামারীর বিধি নিষেধের। এতোদিন জমাজমাট বেচাকেনা চললেও করোনা পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় সরকার জরুরি বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন। আর তাই দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেকটাই এখন কম।
তাই ব্যবসায়ীরা রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। এদিকে মেলার প্রবেশ পথে দায়িত্বরত আব্দুল্লাহ এন্টাপ্রাইজের ইনচার্জ আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, আগের তুলনায় এখন দর্শনার্থী কম। মেলার আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য প্রবেশ পথ ছাড়াও তাদের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য স্টলে স্টলে রাখা হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার। নিরাপদ দূরত্ব রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত নতুন বিধি-নিষেধের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মেলা চালিয়ে নেয়ার ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় ফের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন তারা। মেলায় কাশ্মিরী শাল ও বস্ত্র ব্যবসায়ী ভারতীয় নাগরিক নরেন্দ্র মানসিংহ বলেন, আমরা প্রতিবছর বাণিজ্য মেলায় স্টল দেই। গত বছর বন্ধ থাকার পর এবার আশা নিয়ে স্টল সাজিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো করোনার ধাক্কা যায়নি। ফলে লোকসান হবে। এমনকি অবিক্রিত থেকে যাবে মালামাল।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউপি সদস্য রিটন প্রধান বলেন, প্রজ্ঞাপনে ওমিক্রনসহ করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলে জরিমানার বিধানসহ ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। ওই বিধি বিধানের জন্যই দর্শনার্থী কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব। এছাড়া মেলায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সন্তোষজনক। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে এ বিধি-নিষেধ কার্যকর করা হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই নির্দেশ পালনে মেলায়ও রয়েছে একাধিক টিম।
এদিকে রেস্তোরাঁয় বসে খেতে করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন নির্দেশনা ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মেলায় ঘুরতে আসা মধুখালীর বাসিন্দা শিক্ষার্থী ইমলা মুহান্না বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়ন হওয়ায় খাবার হোটেলে টিকা প্রদর্শন করার কথা বলা হয়েছে। যদিও সবার টিকা সনদ ডাউনলোড করা হয়নি। এমনকি সবার টিকা নেয়া হয়নি। তাই খাবার খেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে। তিনি আরো বলেন, সবার টিকা প্রদান শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিলো।
এ বিষয়ে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে, তাই দর্শনার্থী, ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবো তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মান্য করেন।
রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দীন ভুঁইয়া বলেন, মেলার শুরু থেকে প্রবেশ পথে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং করা হয়েছে। এখনো করা হচ্ছে। ফলে নিরাপদ পরিবেশ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন