শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

টিকাদান কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

করোনা সহসা বিদায় নেবে, এমন সম্ভাবনা কম। দেখা গেছে, একটির পর একটি ভ্যারিয়েন্ট আসছে, সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিধিনিষেধ আরোপ, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কড়াকড়ি এবং টিকা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। ফের নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসছে। আবারো সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। এভাবেই চলছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন এবং ইউরোপের রাজনীতিবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনা মোকাবিলায় নতুন পদ্ধতির কথা ভাবছেন। তাদের মক্তব্য: করোনা কখনো সম্পূর্ণ নির্বংশ হবে না। কোনো না কোনোভাবে থেকে যাবে। তার অস্তিত্ব ও ক্ষতিকারকতার কথা স্বীকার করেই মানুষকে চলতে হবে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বিষয়টি এভাবে বলেছেন: ‘নাগরিকদের এটির সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে। যেমনটি আমরা অন্যান্য অনেক ভাইরাসের সঙ্গে করি।’ একথাও বলা হচ্ছে, যেহেতু এটি দিন দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সুতরাং তাকে মানিয়ে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সব কিছু বন্ধ করে দেয়া, নিজেদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখা, লকডাউন বা শাটডাউনের আশ্রয় নেয়া অর্থাৎ পালিয়ে থেকে বাঁচা যাবে না। তাকে সক্ষমভাবে মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে, মানবিক কর্মপ্রবাহ ও সভ্যতা-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এখন ওমিক্রন নামের যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছে তার তা-ব চলছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের সর্বত্র। কিন্তু কোথাও কোনো কিছু বন্ধ করা হচ্ছে না। লকডাউন-শাটডাউন করা হচ্ছে না। তার বিপরীতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মান্য করার সঙ্গে সঙ্গে টিকার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। করোনা থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ করার কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা কোনো প্রতিষেধক নয়। টিকার মাহাত্ম্য এই যে, তা নিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় বা আক্রান্ত হলেও ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়।

বিশ্বজুড়েই করোনা মোকাবিলায় টিকার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। টিকার ব্যাপারে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সর্বত্র এক সময় মিশ্র মনোভাব ও মতামত ছিল। একপক্ষ টিকাদানের পক্ষে থাকলেও অন্যপক্ষ ছিল বিপক্ষে। ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা ও টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় বিপক্ষবাদীদের সংখ্যা ইতোমধ্যে অনেকটাই কমেছে। আমেরিকার মতো দেশকেও টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রচার-প্রচারণাসহ নানা কৌশল, এমনকি অর্থ পর্যন্ত দিতে হয়েছে। ইউরোপেও নানা উপহার-প্রণোদনা দিতে হয়েছে। কোথাও কোথাও এজন্য যথেষ্ট কঠোরতাও অবলম্বন করতে হয়েছে। এসবের ফলাফল ভালোই হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। এরফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে ব্যাপক অবনমন হয়েছে। ওইসব দেশে দুই ডোজ টিকা ছাড়া বুস্টার ডোজও দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানেও দুই ডোজের পাশাপাশি বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। ভারতে ১৫ বছরের ওপর এবং পাকিস্তানে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও ৫০-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। টিকার ক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশের চেয়ে, এমন কি ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও অনেক পেছনে রয়েছি। করোনা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনেক ক্ষেত্রেই কৃতিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কম থাকার এটাই কারণ। কিন্তু টিকাদানের ক্ষেত্রে বিশৃংখলা, শ্লথতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৮ কোটির মতো মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন করেও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেনি, এমন মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটি প্রায়। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি এখনো টিকার বাইরে রয়েছে। আর এ পর্যন্ত বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে মাত্র ৬ লাখ মানুষকে। বলাই বাহুল্য, এ চিত্র হতাশাজনক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমতে কমতে প্রায় শূন্যে নেমে আসা, রেজিস্ট্রেশন করতে ঝামেলা, রেজিস্ট্রেশন করেও এসএমএস না পাওয়া বা বিলম্বে পাওয়া ইত্যাদি মানুষের অনাগ্রহী হওয়ার কারণ। শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিশেষ ব্যবস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য অপরিহার্য। সেটা করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমবয়সী বিপুল সংখ্যক মানুষের, যারা প্রধানত কর্মজীবী, প্রায় সবাই টিকার বাইরে রয়েছে। তারা কি নাগরিক নয়? দারিদ্র্য ও অশিক্ষার জন্য তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো মোটেই উচিৎ নয়।
করোনা নিয়ন্ত্রণের উপায় জনগণকে টিকার আওতায় আনা। এজন্য টিকার পক্ষে যেমন প্রচারণা চলাতে হবে, তেমনি টিকাদানের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। টিকা দেয়া ও নেয়ার ক্ষেত্রে একটা বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। আমাদের এই বাধ্যবাধকতার জায়গাটি বড়ই দুর্বল। তা না হলে টিকায় আমরা পিছিয়ে থাকতাম না। এই দুর্বলতা দূর করতে হবে। শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সচল রাখতে এর কর্মী-শ্রমিকদের জরুরি ভিত্তিতে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সকলের জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেয়া সম্ভব হলে করোনা থেকে বহুলাংশে নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে। এইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা ও মান্য করানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এখনো রাস্তাঘাটে, হাটে-বাজারে, শপিংমলে, পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। মাস্ক পর্যন্ত অনেকে ব্যবহার করে না। অথচ, করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মাস্ক ব্যবহারের অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। জনজীবন, কর্মপ্রবাহ, উৎপাদন, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল ও নিরাপদ রাখতে টিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো টিকাদান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বাধ্যবাধতা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যান্য দেশ যেখানে করোনার সঙ্গে বসবাস করাকে গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেখানে আমরা পিছপা হয়ে থাকতে পারি না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও চলতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন