চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হচ্ছে ৭ দিনের আয়কর মেলা। চট্টগ্রাম কর অঞ্চল আয়োজিত এই মেলা আয়কর আদায় প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও গতিশীল করবে বলে আশাবাদী কর কর্মকর্তারা। আয়কর মেলার আয়োজন সম্পর্কে অবহিত করতে গতকাল (রোববার) নগরীর আগ্রাবাদ সরকারী কার্যভবন-১ এর তৃতীয় তলায় আয়কর বিভাগের সম্মেলন কক্ষ ‘সাম্পানে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মেলা আয়োজনের সর্বাত্ম প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এতে বলা হয় গেল অর্থ বছরে চট্টগ্রামের ৪টি কর অঞ্চল মিলে ৭ হাজার ৫২ কোটি টাকার আয়কর আদায় করেছে। এবার ৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা আয় কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এবারের কর মেলা হবে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাইলফলক। বর্তমানে চট্টগ্রামে করদাতার সংখ্যা তিন লাখের বেশি এই সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে আয়কর বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. নজরুল ইসলাম। এসময় মেলা উদযাপন কমিটির আহŸায়ক ও কর আপীল অঞ্চলের কমিশনার মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল ২ এর কমিশনার প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, কর অঞ্চল-৩ এর কমিশনার মোতাহার হোসেন, কর অঞ্চল-৪ এর কমিশনার আহমদ উল্লাহ, অতিরিক্ত কর কমিশনার বজলুল কবির ভূইয়া, কর কর্মকর্তা ভুবনমোহন ত্রিপুরা, সাইফুল ইসলাম, মুরাদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ কতটা শক্তিশালী তা নির্ধারণের একমাত্র নির্দেশক হলো রাষ্ট্র তার নিজস্ব সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারে কতটা সফল তার উপর। তিনি বলেন, বিগত এক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে বিদেশী ঋণ ও অনুদান নির্ভর ছিল। কিন্তু বর্তমানে শর্তবিশিষ্ট সেই অনুদানের ঘূর্ণাবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দাতা গোষ্ঠীকে উন্নয়ন সহযোগীতে পরিণত করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে আয়কর দিবস উদযাপন এবং ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা আয়োজনের ফলে জাতীয় বাজেটে প্রত্যক্ষ করের অবদান বেড়ে চলেছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে আয়কর তথা প্রত্যক্ষ কর আহরণের হারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয়কর বিষয়ক শিক্ষা, করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর বিষয়ক অহেতুক ভীতি দূর করা, কর বিভাগের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, কর প্রদানে উৎসাহ, ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা এবং কর ভিত্তি স¤প্রসারণ মেলার উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
মেলায় ২০১৬-২০১৭ সালের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন, সব ধরনের সেবা পেতে প্রত্যেক সার্কেলের জন্য পৃথক বুথ স্থাপন, ইটিআইএন রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নতুন করদাতারা ইটিআইন রেজিস্ট্রেশন ও বর্তমান করদাতারা রি-রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। মেলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে করদাতারা অনলাইনে আয়কর দিতে পারবেন। এছাড়া নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য পৃথক কাউন্টার, মেলায় স্থাপিত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বুথে আয়কর জমা দিতে পারবেন। রিটার্ন পূরণে করদাতাদের সহায়তা করতে মেলায় আয়কর কর্মকর্তা পরিচালিত হেল্প ডেস্কও থাকবে।
ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিগত সেরা করদাতাদের পাশাপাশি এবার থেকে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদেরও সম্মাননা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বর নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে সম্মাননা অনুষ্ঠান হবে। ১ হাজার ৫১ কোটি টাকায় ৪০তলা বিশিষ্ট আয়কর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বজলুল কবির ভূঁইয়া বলেন, প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেই টেন্ডার আহŸান করা হবে। করদাতাদের সাহসী করে তুলতেই আয়কর মেলার আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেলার মাধ্যমে করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে ভীতি কমছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের কর অঞ্চলেরসমূহের অধীন কক্সবাজারে চারদিন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় একদিন, সীতাকুÐ ও চকোরিয়া উপজেলায় দুইদিন, চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা-পটিয়া-লোহাগাড়া-চন্দনাইশ-রাউজান-হাটহাজারী-বোয়ালখালী ও সাতকানিয়া উপজেলা এবং কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় একদিনের ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন