শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

৯৩ বছর বয়সে বিয়ে করে সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায় কুমিল্লার আইনজীবী

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:২৫ পিএম

৯৩ বছর বয়সে বিয়ে করে সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায় কুমিল্লার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইসমাইল হোসেন। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা শহরের দেশওয়ালী পট্টি এলাকার বাসিন্দা মিনুয়ারার (৩৯) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাচিত এই সভাপতি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৭ বছরে আগে তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তার ১ মেয়ে ও ৫ ছেলে আছে।

ইসমাইল হোসেনের বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রবীণ এই আইনজীবীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। পাশাপাশি তার সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু ও সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করছেন তারা। এদিকে অনেক আবার বিষয়টি নিজে মজা করছেন। কেউ কেউ আবার সমালোচনাও করছেন।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর এ প্রসঙ্গে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘কুমিল্লা বার এসোসিয়েশনের পাঁচবারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট ইসমাঈল হোসেন চাচা এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। কোন অপরাধ করেন নি তিনি, নব্বই বছর বয়সে বিয়ে করে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। কুমিল্লায় পাশাপাশি থাকি একই মহল্লায়, আত্মীয়তা না থাকলেও পারিবারিকভাবে আমরা সম্পৃক্ত। প্রায় ছয় ফিট লম্বা একহারা গড়নের ফর্সা সুন্দর মানুষ তিনি। আইনজীবী হিসেবেও যথেষ্ট প্রথিতযশা। চাচার পাঁচ ছেলে এক মেয়ে এবং নাতি নাতনীরা ঘটকের মাধ্যমে উনাকে বিয়ে দিয়েছেন ঘটা করে। চাচী মারা গেছেন আরো বেশ কিছু বছর আগে, দীর্ঘদিন অসুস্থ্যও ছিলেন। চাচার একাকীত্ব দূর করার জন্য সন্তানদের এই পদক্ষেপটা আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়েছে। নতুন চাচীও বলেছেন তিনি খেদমত করার মানসিকতা নিয়েই এই বিয়েতে সানন্দে রাজী হয়েছেন। বাংলাদেশে এখন সব বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি হয়। ফেসবুকে সভ্য আর অসভ্য একাকার হয়ে গিয়েছে। কোন একটা ঘটনা ঘটলে যাচাই বাছাই ছাড়াই কমেন্ট বক্সে ইয়ার্কী ফাজলামো শুরু হয়ে যায়। ঘটনার সাথে যে কোনভাবেই সম্পৃক্ত না সেও তার ফাতরা নাকটা ঢুকিয়ে দেবে, পারস্পরিক সম্মানবোধ আর সৌজন্যতা উঠেই গেছে প্রায়। একটা ইস্যু পেলেই জাতি এটা নিয়ে কয়দিন লেবু কচলানির মধ্যে থাকে কাজকাম বাদ দিয়ে। সারা পৃথিবীতে আমরা একটা নির্মম রসিকতা পরায়ণ জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। রাষ্ট্র সমাজ মিডিয়া জনগণ সবই যেন ক্লাউনের ভূমিকায় এক কাতারে সামিল। আমরা ভুলে যাই প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, আমাকে নিয়েও মানুষ মশকরা করতে পারে। যার জীবন তার চেয়ে পাবলিকের মনোযোগ আরো বেশী। এক অদ্ভুত বেহায়াপনার সংস্কৃতি চলছে দেশে। স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা ঐশ্বরিক। স্বামী আগে মৃত্যুবরণ করলে সর্বসংহা নারীজাতি পরিবারের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন সহজে। স্ত্রী আগে মৃত্যুবরণ করলে সেই ভদ্রলোকটি হয়ে যান দুনিয়ার সবচেয়ে একা মানুষ। একটু চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যত বাস্তবতাটা ভাবুন, তারপর চোখ খুলে আশেপাশের উদাহরণে নজর দিন, একবার নিজেকে মিলিয়ে নিন সেই সঙ্গীন পরিস্থিতির সাথে। যদি মানুষ হোন তাহলে হাসি ফাজলামো মশকরার ভাবনা উড়ে যাবে, অমানুষ হলে আর কোন কথা নেই। যতোই চেঁচামেচি করি বেগমের সাথে, আমি নিজেও চাইনা আমার আগে বেগম আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাক। স্বার্থপরের মতই নিজের একাকীত্বের ভৌতিক পরিস্থিতি উপলদ্ধি করে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাই। এই ফেসবুক আমাদের আর কত অসভ্যতার চোরাবালিতে নিমজ্জ্বিত করবে জানিনা, একটু নিজের মত ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে যারা দাঁত ক্যালানো মজার খেলা মনে করে- এরা মানুষের পর্যায়ে পরেনা কখনোই। শ্রদ্ধেয় এডভোকেট ইসমাঈল হোসেন চাচা’র সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু কামনা করি, চাচীও আনন্দে থাকুন। ভালবাসা অবিরাম।’

সাংবাদিক ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘৯০ বছরে বিবাহ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন কুমিল্লার প্রথিতযশা আইনজীবী ইসমাইল হোসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই বিয়েকে স্বাগত জানালেও, অনেকে আবার ট্রোল করছেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করি যেখানে পরকীয়া বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে ততটা খারাপ চোখে দেখা হয় না, যতটা দেখা হয় দ্বিতীয় বিবাহকে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? একটা সময় ছিল যখন, পরিবারগুলো ছিল যৌথ পরিবার। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো সদস্য সঙ্গীহীন হলে অন্যান্য সদস্যরা তার দায়িত্ব ও যত্ন নিতে পারতো। সাধারনত পুত্র ও পুত্রবধুগণ পরিবারের সঙ্গীহীন বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যের দেখভাল করতো। ফলে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যর বার্ধক্য ও সঙ্গীহীন জীবনের একাকীত্ব ও নিরানন্দ অনেকখানি দূর হতো। তার দেখভালে ঘাটতি থাকত না। কিন্তু এখন পরিবারগুলো একক পরিবার হয়ে গিয়েছে। পরিবারের চিন্তাধারায় যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি জীবনযাপনের জটিল, প্রতিযোগিতা ও গতিময় প্রক্রিয়ায় সন্তানদেরকে পিতা-মাতা ও পিতামহ- মাতামহদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতে হয়। এমতাবস্থায় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কোন সদস্য যখন সঙ্গীহীন হয়ে পড়ে, তখন তার নিঃসঙ্গ জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তার দৈনন্দিন যত্ন-আত্তি ও রোগশোকে দেখভাল করার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কেননা সন্তানেরা কর্মজীবনের চাহিদা মেটাতে বা অন্যান্য নানা কারণে দূরে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনে বাধ্য হয়। শুনতে কিছুটা বৈষম্যমূলক মনে হলেও এটা সত্য যে, একজন নারী বয়স্ক হলেও শারীরিক সক্ষমতা থাকলে তিনি তার দৈনন্দিন দেখভাল নিজেই করতে সক্ষম। পাশাপাশি সন্তানের পরিবারের নারী সদস্য যেমন, মেয়ে ও পুত্রবধূগণ ইচ্ছে করলে তার দেখভাল করতে পারেন। কিন্তু একজন বয়স্ক পুরুষ সঙ্গীহীন হয়ে পড়লে সামাজিক সংস্কারের কারণে তার অনেক দেখভাল মেয়ে বা পুত্রবধূ করতে পারেন না। পুত্রতো সারাদিন কর্মস্থলে কাটায়। এছাড়াও আমাদের দেশে পুরুষরা সাধারণত বিয়ের পর তাদের দৈনন্দিন দেখভালের জন্য পুরোপুরি স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ফলে শেষ জীবনে স্ত্রীহীন হয়ে পড়লে দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও অভ্যস্ততা গত কারণে নিজের দৈনন্দিন দেখভাল, টুকিটাকি প্রয়োজন এবং অসুস্থতায় যত্ন-আত্তি করতে সক্ষম হন না। একাকীত্ব, নিসঙ্গতা ও প্রয়োজনীয় দেখভালের অভাবে একজন সঙ্গীহীন পুরুষের বার্ধক্য জীবন প্রচণ্ড দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। এইজন্যে বার্ধক্যে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ অনেক সময় প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাছাড়াও এর মাধ্যমে অনেক অসহায় নারীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আজকাল সামাজিকভাবে এই ট্যাবু ভেঙেছে কোথাও কোথাও। বাস্তবতা উপলব্ধি করে অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানরা নিঃসঙ্গ বাবার দেখভালের জন্য বয়স্ক নারীদের সাথে বিবাহ দিয়ে থাকেন। এরকম আলোচিত বিবাহ ছিল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ এর দ্বিতীয় বিবাহ। এডভোকেট ইসমাইল হোসেনের দ্বিতীয় বিবাহ এমনই একটি ঘটনা। এ নিয়ে ট্রোল করার কিছু নেই। এই দম্পতির আনন্দময় জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।’

তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে ইকবাল হোসাইন লিখেছেন, ‘উনার সুস্থ থাকার জন্য উনি বিয়ে করেছেন। খুব ভাল থাকুক। সঠিক ইসলামের নিয়ম মেনেই জীবন সঙ্গী হিসাবেই আরেকটি অসহায় নারীকে বিয়ের মাধ্যমেই অর্ধাঙ্গিনী হিসাবেই কবুল করেছেন। দু’জনের জন্য দোয়া করবেন সবাই।’

শুভ কামনা জানিয়ে জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘শুভকামনা ওনাদের জন্য। ওনারা যেন জীবনের শেষ অবধি আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের অটল রাখতে পারেন এই দোয়া করি।’

এবি হাসনাত লিখেছেন, ‘পুরুষ মানুষের বিয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বয়স লাগে না, এই দাদায় সেটাই প্রমাণ করলেন!’

রায়হান বোরহান লিখেছেন, ‘টাকা থাকলে মরার সময়ও বিয়ে করতে চাইলে মেয়েরা রাজি। আর টাকা না থাকলে যুবক বয়সেও মেয়েরা রাজি হয় না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন