স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মাটির নিচ থেকে বের হচ্ছে গণহত্যায় শহিদদের কঙ্কাল ও মাথার খুলির ভগ্নাংশ। এসব দেখে স্থানীয়দের গাঁ শিহরে উঠেছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর আহম্মদ নগরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত বিভাগ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আগের চিহ্নিত বধ্যভূমির ওপর আরও জমি বৃদ্ধি করে ১৯ শতক জমিতে দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণে পিলারের মাটি খুঁড়তেই নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গঁপতঙের হাড়গোড়! অবস্থা দেখে স্থানীয়রা বিচলিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে। কেউ কেউ ’৭১-এর স্মৃতিতে ফিরে যায়। পরে ওইসব হাড়গোড় তুলে সংরক্ষণ করা হয়।
জানা যায়, একাত্তরে আহম্মদ নগর ছিল পাক হানাদার বাহিনীর বড় ক্যাম্প ও জল্লাদখানা। এখানে তৎকালের মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ ধরে এনে নির্বিচারে হত্যা করে আশপাশের ডোবায় ফেলে দিত বা মাটিতে পুঁতে রাখত। ফলে আহম্মদনগরে ঝিনাইগাতী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন, টেকনিক্যাল কলেজ ও তার আশপাশ পুরোটাই গণকবরে রূপ নেয় সে সময়। বিদ্যালয়ে একটি টর্চার সেলের বর্তমান বিজ্ঞানাগারটি আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নির্মম স্বাক্ষী হয়ে। পাশেই নির্মিত ডা. সেরাজুল হক টেকনিক্যাল কলেজ। উত্তর পাশের আহাম্মদনগর- বন্ধভাটপাড়া রাস্তায় একটি কালভার্ট। কালভার্টটি আগে কাঠের ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একাত্তরে ওই কাঠের ব্রিজের নিচে শত শত মানুষকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়া হতো। দেশ স্বাধীনের পর প্রায় ১০/১৫ বছর পর ওই খাল যখন শুকিয়ে যায় তখন সেখানে হাল চাষ দিতে গিয়ে অসংখ্য কঙ্কাল ও মাথার খুলি উদ্ধার করেছিল। এর কিছুদিন পর ওই কাঠের ব্রিজটি ভেঙে রড-সিমেন্টের ঢালাই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। তখনও শত শত কঙ্কালের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা। আরও জানা যায়, এখনও মাঝেমধ্যে ওই ব্রিজের নিচে মাটি খুঁড়তে গেলেই কঙ্কাল ও মাথার খুলির হাড়গোড়ের অংশ উঠে আসে। তবে সরকারিভাবে ওই হাড়গোড়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে স্থানীয়দের দাবি।
নির্মাণাধীন বধ্যভূমির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যান্সল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, কাজ শুরুর কয়েকদিন পর মাটির নিচ থেকে অসংখ্য হাড়গোড় ও মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের ফসিল পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফসিলগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এ ব্যপারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম হিরু সাংবাদিকদের বলেন, বধ্যভূমির কাজ করতে গিয়ে ৭১-এ পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয় আলবদর রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়া শহিদদের কঙ্কালের ভগ্নাংশ বের হওয়ার খবর জেনে তা সংরক্ষণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অবগত করেছি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, বধ্যভূমির কাজ শুরু হলে মাটির নিচ থেকে চারটি মাথার খুলি, দুটি হাড় ও পাঁজরের হাড়সহ বেশকিছু হাড়গোড় উদ্ধার হয়। পরে সেগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে বাক্স বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশে হাড়গোড়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন