শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গার্মেন্টস রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

করোনাকালীন মন্দা কাটিয়ে দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরী পোশাক খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬মাসে(জুলাই-ডিসেম্বর) প্রধান রফতানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার বাড়িয়েছে ৪৬ শতাংশ, এছাড়া কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোর ক্রেতাদের তরফ থেকেও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ক্রয়াদেশ বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি খাতের প্রধান ও ট্রাডিশনাল ক্রেতা। এছাড়াও বেশকিছু দেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করলেও এখন নতুন নতুন বাজার থেকেও ক্রয়াদেশ বেড়ে চলেছে। বিশেষত রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চিলিসহ বেশকিছু অপ্রচলিত দেশ থেকে ক্রয়াদেশ পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশ বেড়েছে বলে জানা যায়। করোনাকালীন মন্দা ও ক্রয়াদেশ বাতিলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নগদ রফতানি প্রণোদনা ইতিবাচক ফল দিচ্ছে এবং প্রণোদনার হার শতকরা ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছেন বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রণোদনার প্রত্যাশায় না থেকে চাঙ্গা বাজারে মূল্য বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উপর বেশি জোর দিতে হবে।

অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাক রফতানির ক্রয়াদেশ গাণিতিক হারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন বিজিএমইএ’র সংশ্লিষ্টরা। করোনাকালীন ক্ষতি ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দেশের প্রধান রফতানিখাতে নতুন সম্ভাবনার হাওয়া আমাদের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। করোনাকালীন মন্দায় দেশের রেমিটেন্স আয় মন্থর হয়ে পড়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে টান পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। ইতিমধ্যে শত শত গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সে সব কারখানাকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তৈরী পোশাক খাতের নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশের অর্থনীতি জাতিকে এক অদম্য অগ্রযাত্রার পথ দেখাচ্ছে। তবে স্বল্পকালীন উচ্চ প্রবৃদ্ধি রফতানি খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করেনা। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনাত্তোর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা এবং বছরান্তে ক্রিসমাস ও হলিডে’র কারণে পোশাক ক্রয়াদেশে যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তা ধরে রাখার প্রশ্নে এখন ওমিক্রণের নতুন প্রাদুর্ভাব আবারো চোখ রাঙাচ্ছে। দেশে দেশে বেড়ে চলেছে করোনার নতুন সংক্রমণ। গত একমাসে আমাদেশ দেশেও সংক্রমন শনাক্তের হার শতকরা দুই শতাংশ থেকে এখন ২৫ শতাংশের উপরে উঠে এসেছে এবং তা প্রদিনিই বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় দেশে-বিদেশে আবারো বিধি-নিষেধ, নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ লকডাউনের আশঙ্কাও প্রবল হয়ে উঠেছে। এ কারণে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেই সরকারকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গৃহিত নির্দেশনা ও পদক্ষেপসমুহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানি আয়ের রেমিটেন্সকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।

মওসুমি রফতানি প্রবৃদ্ধির উপর ভর করে অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে খরা চলছে। করোনা লকডাউনে দেশের লাখ লাখ মানুষ চাকরি, ব্যবসা ও কর্মসংস্থান হারিয়েছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায়, বিশ্বের দ্বিতীয় সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ চীন থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলেও করোনাকালে চীনের শিল্প বিনিয়োগে রেকর্ড পরিমান বিদেশি বিনিয়োগের সমাবেশ ঘটেছে। করোনাকালীন নানা আশঙ্কা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ডিঙিয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হয় চীনে। চীনা সরকারের স্থিতিশীল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, দীর্ঘসুত্রিতা, অস্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মত বিষয়গুলো আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গার্মেন্ট রফতানি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি বিনিয়োগকারি ও কৃষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রফতানি প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে সুবাতাস বইলেও ওমিক্রণের প্রার্দুভাবও বেড়ে চলেছে। এটা অনেক বড় আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে। রফতানি ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দরিদ্র মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার ন্যুনতম ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগও থাকতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন