শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মাস্ক ব্যবহারে অনিহা,বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

হোটেল-রেস্তোরায় নেই টিকা কার্ড প্রদর্শনের কার্যকরী পদক্ষেপ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১৫ পিএম

 ॥

মোঃ আবু শহীদ,;
করোনা মহামারির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এর মধ্যে হোটেল রেস্তোরাঁয় খেতে বা খাবার কিনতে হলে প্রদর্শন করতে হবে করোনা টিকার সনদ (কার্ড)।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতে করোনা টিকা সনদ দেখার কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। কোথাও মানছে না বিধিনিষেধ, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও মাক্স ছাড়াই চলছে অধিকাংশ মানুষ।
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে অনিহা দেখা দিয়েছে। গণপরিবহনগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক ব্যবহার নেই বল্লেই চলে। যে যার মতো করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলী চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে দেশের ১২টি জেলা করোনা সংক্রমনের উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে,এর মধ্যে দিনাজপুর জেলাও রয়েছে,এনিয়ে চরম আশংকায় রয়েছেন এই অঞ্চলের মানুষ।
এদিকে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যবিভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরার্মশ দিলেও তা মানছেনা কেউ। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামুলক মাইকিং করেলেও মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেখা গেছে, খাবারের হোটেল বা রেস্তোরায়ঁ টিকা সনদ দেখার কোন ব্যবস্থা নেই,ফলে অনেকে গাদাগাদি করে হোটেলে বসে খাচ্ছেন এবং খাবার কিনছেন। । মাক্স ছাড়াই খাবার পরিবেশন করছেন হোটেলের কর্মচারীরা। কোথাও নেই টিকা সনদ দেখার ব্যবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেই কোনো নজরদারি। পৌর শহরের খাবারের হোটেলগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র।মাক্স ছাড়াই সাধারণ মানুষ অবাধে ঘোরা ফেরা করছেন।
পৌর শহরের রাজধানী হোটেলের ম্যানেজার ইমরান হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি পুরোপুরি অবগত নন,প্রসাশনের তৎপরতা না থাকার কারনে,এখনও সেরকমভাবে দেখা হচ্ছে না টিকা সনদ। অনেকে এখনও টিকা দিতে পারেননি, কেউ দিয়েছেন কিন্তু সনদ সঙ্গে আনেননি, কেউ আবার একটি টিকা দিয়েছেন। এসব নানা কারণে টিকা সনদ দেখাতে পারছেন না ক্রেতারা। ওই হোটেলে নাস্তা করতে আসা একজন বলেন, তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হবার কারনে টিকা সনদ সঙ্গে আনতে পারেননি। এরপর থেকে খাবার খেতে এলে নিয়ে আসবে।
ঢাকা বিরানী হাউজ এর কর্মচারী শাহিন বলেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না,এর পর থেকে বিষয়টি যাচাই করবেন। ওই দোকানে খেতে আশা ইশিতা জামান বলেন,হোটেল মালিকরা আমাদের কাছে কখনো টিকা সনদ দেখতে চাইনি তাই সঙ্গে আনেননি। রহমানিয়া খাবার হেটেলের মালিক জিয়াউর রহমান,বরকোতিয়া হেটেলের ম্যানেজার সাইদ রানাসহ কয়েকজন হোটেল মালিক বলেন,এই বিধি নিষেধের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না,এরপর থেকে তারা বিষয়টি মেনে চলবেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানাগেছে,করোনা ভ্যাক্সিনের জন্য এই উপজেলায় এপর্যন্ত এক লক্ষ ২৩হাজার ৫৯৩জন নিবন্ধন করেছেন। প্রথম ডোজ গ্রহন করেছেন এক লক্ষ ৯হাজার ১২১জন,দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছেন ৭৭হাজার ১২৯জন,বুষ্টার ডোজ গ্রহন করেছেন এক হাজার ৭৮৪ জন। ১২-১৮ বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের ১৬হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে,তাদের জন্য আরো ৫হাজার টিকার চাহিদা দেয়া হয়েছে। মোট সনাক্ত ৬৯৭জন,এরমধ্যে ৬৮২জন সুস্থ্য হয়েছে,মারা গেছেন ১৩জন,চব্বিশ ঘন্টায় একজনসহ বর্তমানে মোট ২জন আক্রান্ত রয়েছেন। যা গত এক মাস আগেও শুন্যের কোঠায় ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন,করোনা বিষয়ে সরকারী বিধিনিষেধ সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে এবং মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে। ঘুব শিঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিধি নিষেধ অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মশিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,সরকারের পক্ষ থেকে সকলকে সচেতন করতে বারবার প্রচার প্রচারনা করা হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ ঠিক মত বিধিনিষেধ মানছেনা,যেহেতু স্ব্স্থ্যা বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের জেলাকে উচ্চ ঝুকির মধ্যে ধরা হয়েছে,সেহেতু সকলকেই সরকার ঘোষিত বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে এবং মাক্স ব্যবহার করতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই। নয়তো সামনে আরো বড় ধরনের সমস্যার আশংকা রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন