‘পুষের ঠাণ্ডায় মইষের শিং নড়ে, মাঘের ঠাণ্ডায় বাঘ ডাকে’-রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার এই প্রবাদবাক্যের মতই মাঘের হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে রংপুর অঞ্চলে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। বেলা ১০টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দিনের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকলেও বিকেল ৫টা হতে না হতেই এ অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করে। আর সন্ধ্যা নামার পর পরই বইতে শুরু করে প্রচন্ড হিমেল হাওয়া। মধ্যরাতে তাপমাত্রার নেমে যায় একক সংখ্যায় এবং তা অব্যাহত থাকে সকাল পর্যন্ত ।
উত্তরের এই হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এতে করে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু, যুবক-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। দিনের বেলায়ও কাঁপছে মানুষ, ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড হিমেল হাওয়ায় জুবুথুবু হয়ে পড়েছে মানুষসহ গৃহপালিত পশু। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে বসবারত ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষগুলো গরম কাপড়ের অভাবে চরম র্দুভোগে পড়েছেন। প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের কারনে দিনের বেলাতেও ক্ষেতে-খামারে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না কৃষকসহ খেটে খাওয়া নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। ইতিমধ্যে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গত ২-৩ দিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টার পর থেকে রাতভর ঘন কুয়াশা ঝরছে এ অঞ্চলে। রাত যতই গভীর হয়, কুয়াশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে এবং তা পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরতে থাকায় রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মকভাবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সঙ্গে প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় মানুষের হাত-পা জিম লেগে যাচ্ছে। এতে করে মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে পারছে না। নগরীতেও রিক্সা-ভ্যান চালকরা একটু পর পর হোটেল কিংবা চায়ের দোকানে চুলার কাছে গিয়ে হাত শেকে নিচ্ছেন। শিশু-বৃদ্ধরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনভর ঘরের মধ্যে গায়ে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
কনকনে ঠাণ্ডায় প্রয়োজনের তুলনায় গরম কাপড় না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাহিল শ্রমজীবী মানুষেরা জীবিকার তাগিদে তবুও ছুটছে পথে-প্রান্তরে। কনকনে ঠাণ্ডার কারনে সন্ধ্যা নামার পর পরই নগরীর মার্কেটগুলো ফঁকাা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ৮টা বাজতে না বাজতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিপনী বিতানগুলো। নগরীর রাস্তাগুলোও প্রায় যানবাহন শুন্য হয়ে পড়ছে। রাত ১০টা হতে না হতেই জনমানবশুন্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে ছোট-খাট খামারীরা মারাত্মক বিড়ম্বনায় পড়েছেন গরু-ছাগল নিয়ে। প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে এ অঞ্চলে শীতজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন এলাকায় কোল্ড ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হাপানীর মত রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য জেলার হাসপাতালগুলোতেও শীতজনিত এসব রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন স্থানে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরও বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। আগামী দুই দিন শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে রংপুরের আবহাওয়া অফিস।
অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়লেও এবছর এ অঞ্চলে শীত নেমেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়ে দফায় দফায় এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে গত দু’দিন ধরে প্রচন্ড হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা এ অঞ্চলের মানুষকে একেবারেই কাহিল করে দিয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলো চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন